৭৫এ ১৫ আগস্ট‌কে নি‌য়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২১

সীমান্ত বাংলা প্রতি‌বেদক : প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের ঘটনা নিয়ে এখন খোলাখুলি ভাবে কথা বলছে। বিশেষ করে দলের নেতাদের ভূমিকা এবং প্রতিবাদ করার ব্যর্থতা নিয়ে তিনি পুরো আগস্ট মাস জুড়েই সরব ছিলেন। আগস্টের প্রথম দিন কৃষক লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রথম দলের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেন এবং গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের আলোচনা সভায়ও ১৫ই আগস্টে দলের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন।

ভার্চুয়ালই যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেছেন আমাদের বাসায় যখন গুলি শুরু হয় বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হয়, তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়, সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। এই বক্তব্যের পর আওয়ামী জোটের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়, আওয়ামী লীগ যে ১৪ দলীয় জোট করছে সে ১৪ দলের কারো কারো ভূমিকাও এখন নতুন করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ জোটে যাদেরকে নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন:

১. তোফায়েল আহমেদ: তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সবসময় বিতর্ক ছিলো। তোফায়েল আহমেদ প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। ১৪ই আগস্ট রাতের শেষ পর্যন্ত তোফায়েল আহমেদই বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নামিয়ে দিয়েছিলেন। সেই তোফায়েল আহমেদ এই ষড়যন্ত্রের কথা কিছুই জানতেন না, এটি আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই মানতে পারেন না। আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে যে তোফায়েল আহমেদ একটু কোণঠাসা তার প্রধান কারণ এই অবিশ্বাস।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন, তোফায়েল আহমেদের দায়িত্বে রক্ষীবাহিনী ছিলো। সেই রক্ষী বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে এই অভিযোগও উঠেছে যে জিয়াউর রহমানকে বিদেশের রাষ্ট্রদূত করা হয়েছিল কিন্তু তোফায়েল আহমেদের তদবিরের কারণেই শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয়নি। যদিও তোফায়েল আহমেদ নিজে এই ধরনের তদবিরের কথা অস্বীকার করেছেন এবং এরকম বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তারপরও সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে তখন তোফায়েল আহমেদ ভালোই কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছেন এবং একটু অস্বস্তিতেই রয়েছেন।

২. প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক: প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকা নিয়েও ১৫ই আগস্টের পর থেকে প্রশ্ন উঠেছিল। আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন। কিন্তু তার ছেলে নাহিম রাজ্জাক এখন এমপি। এই ঘটনা তাকেও কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছেন।

৩. কে এম সফিউল্লাহ: কে এম সফিউল্লাহ ছিলেন সেনাপ্রধান। তিনি এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত আছেন। যদিও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন। কিন্তু ১৯৮১ সাল থেকে কে এম সফিউল্লাহ আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের কাছে তিনি অবিশ্বাসী, অপাংক্তেয় একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।

৪. হাসানুল হক ইনু: পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে জাসদের ভূমিকা নিয়ে এখন নতুন করে বিতর্ক হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীমহল নতুন করে যে গবেষণা এবং নিবন্ধন গুলো প্রকাশ করছে তাতে সুস্পষ্টভাবে বলছে যে, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পরিস্থিতি তৈরি করার ক্ষেত্রে জাসদের ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত নেতিবাচক। সেই প্রেক্ষিতেই হাসানুল হক ইনুর নাম আসছে। সে সময় হাসানুল হক ইনু জাসদের গণবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ সহ বিভিন্ন অরাজকতা সৃষ্টিতে তার ভূমিকা ছিলো বলেও আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন নিবন্ধ এবং তথ্য-উপাত্তে বেরিয়ে আসছে। ফলে জোটের শরিক হিসেবে সাবেক এ মন্ত্রী এখন অনেকটা চাপে আছেন।

৫. শাজাহান খান: পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের সময় শাজাহান খান জাসদ করতেন। এখন যেহেতু জাসদের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে তোলপাড় চলছে তাই শাজাহান খানও কিছুটা চাপে আছেন।

পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর রক্তের উপর দিয়ে যারা যে সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতারা মন্ত্রিসভায় গিয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগে নেই। যাদেরকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল পঁচাত্তরের পরের ভূমিকা নিয়ে যেমন: ড. কামাল হোসেন কিংবা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম তারাও এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই। কাজেই যারা এখনো আওয়ামী লীগে আছেন তাদেরকে নিয়ে এখন নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সীমান্তবাংলা/শুক্রবার ২৭আগস্ট/২১/মউ