সুইপার থেকে অফিস সহায়ক এখন ইয়াছিন!

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২

           ” নিয়োগ বিধিমালায় রাত কে দিন “

এন আলম আযাদ, কক্সবাজার ;

কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মচারী দীর্ঘ ৮ বছর মূল পদের বিপরীতে অফিস সহায়কের বেতন ভাতা উত্তোলন করার চাঙ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার নিয়োগ বদলী ও পদোন্নতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।অনেকই তার চাকরি নন মেডিকেল কর্মচারী অধ্যাদেশের পরিপন্থী বলে আঙুল তুলেছে।তার বিরুদ্ধে উত্তাপিত এমন অসংখ্য অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এ অনিয়মে সিভিল সার্জন দপ্তরের প্রধান সহকারী ও হিসাব রক্ষক সহ আরও গুটিকয়েক অসাধু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে।তাদের যোগসাজশেই অফিস সহায়কের কথিত পদোন্নতি নিয়ে বেতন ভাতা সহ ঐ পদের বর্ধিত বেতন ভাতা উত্তোলনের দুঃসাহস পাচ্ছে ঐ কর্মচারী।

অফিসিয়ালি ইয়াছিন সুইপার পদবীর হলেও কীভাবে গত ৮ বছর ধরে অফিস সহায়কের বেতন উত্তোলনে সরকারী অর্থ লোপাটে সিদ্ধহস্ত তাও বিশ্বয় জেগেছে সচেতন মহলে।
৯৮ সালে কক্সবাজারের পেকুয়া ইউনিয়নে সৌদি অর্থায়নে নির্মিত ২০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে সুইপার পদে মোঃ ইয়াছিন সহ আরো ১৪ জনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদ গুলোতে ৮ টি শর্তে চুড়ান্ত নিয়োগ দেন প্রকল্পটির তৎকালীন পরিচালক ও জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ বেলায়েত হোসেন।

বিদেশী এ প্রকল্পে অন্যান্যদের মধ্যে সুইপার পদে নিয়োগ পান মোঃ ইয়াছিনও।সরকারের স্বাস্থ্য ও পপ মন্ত্রানালয়ের বেসরকারী এ প্রকল্পে কর্মচারী নিয়োগে বিধিমালা মোটেও অনুসৃত হয়নি।এ সুযোগে সুইপার ইয়াছিন ঐ কর্মস্থলে একদিনের জন্যও তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে সেই থেকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন দপ্তরে অবৈধভাবে চাকরি স্থানান্তরে দুঃসাহস দেখিয়েছে।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ২৯ / ০১/১৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সালমা সিদ্দিকা মাহতাব স্বাক্ষরিত এক প্রঙ্গাপনে এ প্রকল্পে নিয়োগকৃত সকলের চাকরী রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ করা কালীনও ইয়াছিনকে সুইপার পদে নিয়োগ দেখানো হয়।শুধু তাই নয় রাজস্ব খাতে চাকরির পাশাপাশি এই ইয়াছিনকে পদোন্নতির নামে একধাপ এগিয়ে রেখে তাকে অফিস সহায়ক হিসাবে বেতন ভাতা ও অন্যান্য পারোতোষিক উত্তোলনে সহযোগীতা করছে সিভিল সার্জন অফিস কেন্দ্রীক দূর্নীতিবাজদের সেই চক্রটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানান,সুইপার, নিরাপত্তা কর্মী ও বাগান মালীর ক্ষেত্রে পদোন্নতি আছে বলে আমার জানা নেই।ইয়াছিন কীভাবে সুইপার হয়েও অফিস সহায়কের বেতন ভাতা পান তা আশ্চুর্য বিষয় বটে।আরেকজন মনে করেন সিভিল সার্জন দপ্তরে শস্যের মধ্যে ভূত থেকে গেছে এরাই ইয়াছিনকে স্বাস্থ্যবিধি ডিঙিয়ে তথাকথিত পদোন্নতি এবং এসব কর্মকাণ্ডে কম্পিউটিং জালিয়াতি কান্ডেও সুযোগ করে দিচ্ছে।তারা মনে করেন অধিদপ্তরের পাশাপাশি সরকারের দূর্নীতি প্রতিরোধের প্রতিষ্ঠান গুলো একটু সক্রিয় হলেই সুইপার ইয়াছিন ও তার সহযোগীদের আরও অনেক দূর্নীতির থলের বিড়াল খসে পড়বে।

এব্যাপারে সাবেক এক স্বাস্হ্য কর্মকর্তা বলেন এরুপ পদোন্নতি বেতন ভাতা উত্তোলন নিয়োগ বিধিমালার সাথে সাংঘর্ষিকও।

তদন্তে আরও তথ্য মিলেছে গত ৮ বছর ধরে সুইপার ইয়াছিন অফিস সহায়ক পদবীর অনুবলে বেতন ভাতা নিয়মিতই উঠাচ্ছেন এমন কয়েকটি বেতন ভাতা গ্রহনের বিল ভাউচার প্রতিবেদকের হস্তগত হয়েছে।সচুতুর ইয়াছিন
অবৈধ পদোন্নতি আঁকড়ে রাখতে সরকার যার সমর্থনও তার এমন ভূমিকায় থাকেন।এমনকি কখনো ক্ষমতাসীন সরকারের খাস বান্দা আবার কখনো দলটির উর্ধতন কয়েকজন নেতাকে তার আত্বীয় হিসাবে জাহির করে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রভাব খাটান।এমনকি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আত্বীয় কর্তা তাকে এমন অনিয়মে দুষ্ট চক্রটির ন্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এই
ইয়াছিনের পুরো পরিবার মৌলবাদী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও নিজেকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের পরিচয়ে ৯৮ সালে সুইপার পদের এ চাকরিটি নানা কৌশলে ভাগিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ স্হানীয়দের। এদিকে সুইপার ইয়াছিনের মতো এমন নিয়োগের ন্যায় পটুয়াখালীর জেলা সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধেও ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করায় ঐ জেলার দূর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক তৎকালীন সিভিল সার্জন সহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার চার্জশীট গত বছরের শেষ দিকে আদালতে উপস্থাপন করেছেন।
অভিঙ্গ মহল মনে করছেন সুইপার ইয়াছিনের বেলায়ও অনুরূপ অপকর্ম সংঘটিত করেছেন তার নিয়োগ কর্তারা।একইভাবে মেডিকেল কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা জলাঞ্জলী দিয়ে কাজের মূল্যায়ন না করেই তথাকথিত অফিস সহায়ক বানিয়ে সরকারের প্রদেয় সুবিধাদি গ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছেন এমন অভিমত তাদের।
এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত সুইপার ইয়াছিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমার বিরুদ্ধে অফিস কেন্দ্রীক একটি চক্র সক্রিয়।সরকারি নিয়মের বর খেলাপ করছি না।বেশি কিছু বলতে চাই না বলে ফোন লাইন কেটে দেন তিনি।

তবে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মাহবুবুর রহমান জানান, নিয়োগের সময়তো আমি ছিলাম না।সে কোন পদের কত বেতন ও পারিতোষিক নিচ্ছে সেটা আমার জানার কথা নয়।তারপরও নিয়োগ বিধিমালার লঙ্ঘন হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্হা নেয়ার পক্ষে আমি।