সাংবাদিক, সরকারী কর্মকর্তা নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা প্রদান ও নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয় কি?

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০

বাংলাদেশের সংবিধান কর্তৃক দেশের প্রতিটি নাগরিক অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও মাথা গুজাবার ঠাঁই পাবার মৌলিক অধিকার প্রাপ্ত। তাই মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক নিরাপত্তা পাবার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান কর্তৃক যেমন স্বীকৃত, ঠিক তেমনিভাবে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান অধিকার পাবার, স্বাধীনভাবে চিন্তা, বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার, আইনের আশ্রয় গ্রহন করার স্বাধীনতা, বাংলাদেশের মৌলিক চার নীতির অন্যতম একটি হচ্ছে গনতন্ত্র ও মানবাধিকার সংরক্ষনসহ অনেক অধিকারের কথা রয়েছে, যা দেশের নাগরিকদের জন্য অবশ্যই রাষ্ট্র কর্তৃক সুনিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও মৌলিক আইন ও মৌলিক মানবাধিকারের রক্ষাকবচ, ‘বাংলাদেশের সংবিধান’ কর্তৃক স্বীকৃত।

দেশে প্রতিদিন কত ঘটনা ঘটে চলছে, সব ঘটনা বা খবরাখবর কি আর গনমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থান পায়! প্রতিনিয়ত, কত খবরই বেখবর হয়ে রয়ে যায় সারা জীবনের জন্য , তার কি কোন ইয়ত্তা আছে?

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যেখানে এত অল্প আয়তনে, এত বিশাল জনগোষ্টীর লোকজন বসবাস করে! বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইলে গড়ে প্রায় ২ হাজারের উপর লোক বাস করে। কিন্তু মায়ানমার বাস্তুচ্যুত রোহিংগা অধ্যুষিত উখিয়া টেকনাফ এলাকায় প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ২৬ হাজার! যা সারা বিশ্বে বিরল ঘটনা বলে প্রমানীত।

ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে হয়ে উঠছে দিনকে দিন। এখানে অপরাধীরা অপরাধ করে পার পেয়ে যাবার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এদেশে অপরাধীরা বিভিন্ন পরিচয়ে অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় গঠিত অপরাধ চক্র সবচেয়ে কৌশলী ও শক্তিশালী। তাদের শক্তিমত্তা, সুগঠিত দলবল, কার্যাবলীর কাছে সাধারন মানুষ মারাত্মকভাবে অসহায়। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে কর্তিত্ব বজায় রেখে চলছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তারাই সহজে আইনের চোখকে ফাঁকি দেবার সাহস পাচ্ছে বা তারাই বিভিন্ন কৌশলে আইনের ফাঁক ফোকরে পার পেয়ে যাবার প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবার অনেকক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য নিজেরা অপরাধ যেমন করছেন, ঠিক তেমনি অপরাধীচক্রের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন। দেশের সংবিধান প্রদত্ত আইনের চোখে সবাই সমান কথাটা এখানে একপেশে, আইনের শাসনের বাস্তবিক প্রয়োগ নেই, ধনী গরীব নির্বিশেষে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা রয়েই গেছে!

গত ৩১শে জুলাই-২০২০ রাতে, টেকনাফের শামলাপুর নামক স্থানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য বা কর্মকর্তা কর্তৃক মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ আরশাদ খান হত্যার ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এ হত্যা মামলায় টেকনাফের বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ অনেকেই বিচারের অধীনে জেলে আটকানো। এ-র অব্যবহিত পূর্বে উখিয়ার বারবার নির্বাচিত অত্যন্ত জনপ্রিয় বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মৌলভী বখতিয়ার আহমেদ মেম্বারকে, রাতের অন্ধকারে উখিয়া ও টেকনাফ থানার ওসি বাসা থেকে তুলে নিয়ে কথিত বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রায় ১৬৪ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তার (ওসি প্রদীপের) বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ হচ্ছে, তিনি টেকনাফ থানায় রীতিমত নিজের শাসনের জন্য অন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করে রেখেছিলেন। তার থাবায় যেমন ইচ্ছে করার একচেটিয়া অধিকার ছিল, কেহ টু শব্দের রা করতে পারতনা। যারাই এক আধটু প্রতিবাদ বা বিরুদ্ধাচরন করত তাদেরকে নির্যাতনের অন্তঃ ছিলনা। সে প্রসংগে সাংবাদিক সিরাজুল মোস্তফার ঘটিনা ও অবস্থা নিশ্চয়ই সবাই অবগত।

বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ, মিথ্যা অভিযোগ করে, ইয়াবা নাটক সাজিয়ে সাধারন মানুষ, যাকে ইচ্ছে ধরে বন্দুক যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার সাথে বনিবনা না হলে, বা কেহ তার কথার বিরুদ্ধ ভাব দেখালে, তাকে ধরে নিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোডে বন্দুক যুদ্ধ সাজিয়ে হত্যার মিশন শেষ করত নিঃসংকোশে ! এভাবে ওসি প্রদীপ প্রায় দেড় শতাধিক অপরাধী/ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার রেকর্ড করেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত সপ্তাহে মহেষখালীতে একজন চেয়ারম্যান কর্তৃক দু’জন সাংবাদিককে ভূয়া সাংবাদিক হিসেবে গলায় ষ্টিকার লাগিয়ে অসম্মান করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাধ্যমের সংবাদ কর্মী, প্রতিবেদক, রিপোর্টার, সাংবাদিককে মারধর, নির্যাতন, মামলা,হামলা, হত্যা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ঘোড়াশালের ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে রাতের অন্ধকারে দূর্বৃত্ত কর্তৃক বাবাসহ হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হয়ে আইসিইউ তে জীবন মরনের সন্ধিক্ষনে রয়েছেন। আবার, গতকাল রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে বাসায় যাবার পথে, দৈনিক কক্সবাজারের স্টাফ রিপোর্টার, সময় টেলিভিশনের কক্সবাজারস্থ স্টাফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন রুবেলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টাসহ অসংখ্য ঘটনা দেশে বিদ্যমান আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল অবস্থার ঈংগিতবহ।

আমি হঠাৎ করে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি, রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, পেশাজীবি, সাধারন ব্যক্তিবর্গের উপর আক্রমন, হামলাগুলোকে অশুভ লক্ষন বলে মনে করি। আমি এসমস্ত হামলা, হত্যা, হত্যাচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। তাছাড়া বিশেষ করে, দেশের বিভিন্নস্থানে সাংবাদিকগনের উপর নারকীয় নির্যাতন, হত্যা চেষ্টা, হত্যা, মিথ্যা মামলা, হয়রানীমূলক মামলা ও মান-সম্মানের উপর কালিমা লেপনের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তা অচিরে বন্ধ করে, এসব অপরাধের মুল হোতাদের চিহ্নিত করে, দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

অনেকেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। দেশ, জাতি ও মানুষের নিঃস্বার্থ সেবার প্রয়োজনে এবং দেশ ও দশের বৃহত্তর মংগল কামনার শুভ ইচ্ছা থেকেই সাংবাদিকতার দিকে আত্মনিয়োগ করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সম্মানীত সাংবাদিকগন সমাজের দর্পণস্বরুপ। অনেকেই তাদেরকে মানুষের ষষ্ট ইন্দ্রিয় ও সমাজের তৃতীয় চক্ষু হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া, প্রিন্টিং মিডিয়া ও অনলাইন পোর্টালের প্রতিনিধি, সংবাদ কর্মী, রিপোর্টার, প্রতিবেদক, সচিত্র প্রতিবেদক ও সাংবাদিকগনের উপর এত রাগ, ক্ষোভ, নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার কারন কি তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? এ-র কারন আজ দিবালোকের মতো পরিস্কার। সাংবাদিকরাই আজ দেশের দর্পণ হয়ে নানুষের সামনে সকল দূর্নীতি, দূঃশাসন, মাদক, ইয়াবা, সন্ত্রাস, রাহাজানি, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরের অর্থ লোপাটকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দূর্নীতি, অপশাসন, মাদক, ইয়াবার বিরুদ্ধে সোচ্চার, বলিষ্ট ও জোরালো ভূমিকা পালন করছেন। বর্তমানে দেশে সত্যিকারের কার্যকরী বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে-মাদক, ইয়াবা, রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তর ও সেক্টরের নানামুখী অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দূঃশাসন, অপশাসন, অন্যায়, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের হয়ে বিরুধী দলের মূখপাত্র হয়ে সোচ্চার লেখনী, প্রতিবেদন, স্থিরচিত্র, চলমানচিত্র দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জোরালো ভূমিকা পালন করার কারনে-সেসকল মাদক কারবারী, ইয়াবা ব্যবসায়ী, দুর্বৃত্ত, দূর্নীতিপরায়ন ব্যক্তি-ব্যক্তিবর্গ, অপরাধী, সন্ত্রাসী, অনিয়মকারী ব্যক্তিবর্গের কাছে কর্তব্যনিষ্ট, আপোষহীন সম্নানীত সাংবাদিক ভাইয়েরা রীতিমত চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন। এরই ফলস্বরুপ দিনে দিনে সাংবাদিক নির্যাতনের হার জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলছে।

আর সাংবাদিকগনের উপযুক্ত ও কার্যকরী সংগঠনের অভাব, নিজেদের মধ্যে বহুধা বিভক্তি, বিভিন্ন দলের লেজুড়বৃত্তি ও আপোষকামীতা, বিভিন্ন দলে ও উপদলে বিভক্ত হবার কারনেও সাংবাদিকগণ নিরাপত্তাহীনতায় পতিত হচ্ছেন বলে প্রতীয়মান, প্রতিনিয়ত। তাই এখনই যতার্থ সময়, সকল পর্যায়ের সাংবাদিকগনের ভেদাভেদ, ভুল বুঝাবুঝি, ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা গোষ্টী স্বার্থপরিহার করে ইষ্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলে একযোগে সকল অনিয়ম, দূর্নীতি,মাদক-ইয়াবা, সন্ত্রাস, হত্যা, খুন, রাহাজানি, হুমকি, ধামকি, বিভিন্ন স্তর ও স্বার্থান্বেষী মহলের রক্তচক্ষুকে ঊপেক্ষা করে দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করার মহান মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে এগিয়ে যাবার। আমি সকল সাংবাদিক ভাইসহ সকল মানুষের সুস্থতা, নিরাপত্তা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সাথে সাথে রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের রাষ্ট্রের মৌলিক সংবিধান প্রদত্ত নিরাপত্তা প্রদানের জোর আহবান ও দাবি জানাচ্ছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
এম আর আয়াজ রবি।
(লেখক, কলামিষ্ট ও মানবাধিকার কর্মী).

 

৬/৯/২০২০ইং / সীমান্তবাংলা/ ম শা