লকডাউনেও ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১৪ শিশুর স্বাভাবিক জন্ম

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২১

নূরে আলম সিদ্দিকী,বিরামপুর : রাত তখন ১২টা। প্রসববেদনা ওঠে লিনা আক্তারের (২৫)। একে তো গভীর রাত তার উপরে করোনা মহামারি প্রতিরোধে এলাকায় চলছে কঠোর লকডাউন। এমতাবস্থায় অনেকটাই বিপদে হয়ে পড়ি। একদিকে করোনার আতঙ্ক অন্যদিকে স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের জন্য চিন্তা। লকডাউনের মধ্যে কোথায় যাবো আর কী করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না।

অবশেষে আমার এক প্রতিবেশির পরামর্শে সেই রাতেই ভ্যানে করে কাদা রাস্তা পাড়ি দিয়ে স্ত্রীকে ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখানে ডাক্তার ও নার্সদের আন্তরিক সহযোগিতায় ভোর সাড়ে ৪টায় আমার স্ত্রীর নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমাদের কোলে আসে ছেলে সন্তান। দেশের এ দুর্যোগকালে এমন ভালোমানের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে আমি ও আমার পরিবার অত্যন্ত খুশি- এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ত্রীকে নিয়ে আসা উপজেলার দাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম।

সারাদেশে করোনা মহামারিতে অনেক সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যখন ঠিকমত সেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিক তখনও অনাগত শিশুদের সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পৃথিবীতে স্বাগত জানাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মানবিক স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী সবাই একই পরিবারের সদস্য হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আর এ মানবিক কাজে সিনিয়র নার্স মায়ানূর খাতুনসহ অন্যান্য বেশ আন্তরিকতার সাথে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাসে ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফুলবাড়ি, বিরামপুর, পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রায় দেড় হাজার সাধারণ রোগীসহ নারী প্রসূতি পূর্ববর্তী ও প্রসূতি পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে দেশে লকডাউনের মধ্যেও মঙ্গলবার পর্যন্ত ২১৪ জন প্রসূতির সুষ্ঠু নরমাল ডেলিভারি মাধ্যমে ২১৪টি সুস্থ শিশুর জন্ম হয়েছে। এছাড়াও গত জানয়ারি থেকে চলতি জুন পর্যন্ত এএনসি সেবা নিয়েছেন ৯২১ জন ও ডিএনসি সেবা নিয়েছেন ৪১৯ জন। মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত বৃষ্টির দিনে ৫জন প্রসূতি ও শতাধিক সাধারণ রোগী

আউটডোরে স্বাস্থসেবা নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোছা. চামেলী খাতুন প্রসূতি বিভাগে ভর্তি থাকা প্রসূতি মা ও নবজাতকের নিয়মিত দেখভাল করেন এবং রোগীদেরকে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে কথা হলে ডা. মোছা. চামেলী খাতুন বলেন, ‘সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেসব রোগী আসেন তাদের অধিকাংশই গরীব।

একজন ডাক্তার হিসেবে আমাদের উপর অর্পিত যে দায়িত্ব তার সবটুকু দিয়েই আমরা এলাকার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। দেশে করোনা পরিস্থিতিতে নিজের জীবনে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও দেশের এ দুঃসময়ে আমাদের আন্তরিক সেবার মাধ্যমে প্রসূতি মায়ের কোলে একটি সুস্থ্য ও ফুটফুটে নবজাতককে তুলে দিতে পেরে নিজেকে একজন গর্বিত স্বাস্থ্যকর্মী মনে করি।’ ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি মায়েদের জন্য এমন স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের মধ্যেও কোনো প্রসূতি মা যেন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হন সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে অনেক অসহায় ও গরীব নারীরা স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। সকলের সহযোগিতায় দিনদিন এখানে স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়ছে। নরমাল ডেলিভারীকে উৎসাহীত করার জন্য নবজাতক ও প্রসূতি মায়ের জন্য উপহার সাগ্রমী হিসেবে তোয়ালা,সাবান, লোশন,পাউডার, মশারী, বেবি ড্রেস, সেভলন ও তুলা প্রদান করা হচ্ছে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই না, এলাকার একজন মানুষও এখান থেকে স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে মনে কষ্ট নিয়ে ফিরে যাক।

 

সীমান্তবাংলা ডক্সে/৩০ জুন/এডমিন ইবনে 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন ।