রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছায় পাহারা দেওয়া ভলান্টিয়ারদের মাঝে লাঠি বাঁশি বিতরণ করলেন ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক। 

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২২

 

নুরুল ইসলাম বিজয়, উখিয়া

১৪ এপিবিএন অধিনায়ক এর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছায় পাহারা দেওয়া ভলান্টিয়ারদের মাঝে লাঠি বাঁশি বিতরণ কর্মসূচি।

সোমবার ১১ জুলাই ২০২২ খ্রিঃ সকাল ১১ঘটিকায় কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইরানি পাহাড় পুলিশ ক্যাম্প এলাকায় রাত্রিবেলা দায়িত্ব পালনরত রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ারদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) জনাব মোঃ নাঈমুল হক পিপিএম,
এ সময় তিনি উপস্থিত ভলান্টিয়ারদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ দেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা সহ তাদের মাঝে বাঁশি বিতরণ করা হয়।

অধিনায়ক নাঈমুল হক জানান, মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর গত ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ১৪ এপিবিএন পুলিশ তাদের আওতাধীন ১৫ টি ক্যাম্পে সর্বপ্রথম রোহিঙ্গাদের ভেতর থেকে স্বেচ্ছা পাহারা ব্যবস্থা চালু করে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বাকি ক্যাম্পগুলোতেও তা কার্যকর করা হয়। সোমবার ১১ জুলাই তার সুফল পেতে শুরু করেছে ১২ লক্ষেরও অধিক রোহিঙ্গারা। ১৪ এপিবিএন এর আওতাধীন ১৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ারলি স্বেচ্ছায় পাহারা দিয়ে আসছে প্রতিরাতে।

১৪ এপিবিএন অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মোঃ নাইমুল হক পিপিএম বলেন, স্বেচ্ছায় পাহারা দেওয়া ভলান্টিয়ার সার্ভিস” নতুন কোন ধারণা নয়। বরং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তা একটি বহুল ব্যবহৃত পুরনো কার্যকরী পন্থা। বাংলাদেশের সকল থানা এলাকায় এ ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত আছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ডাকাতি, চুরি, অপহরণ, ছিনতাই বেশি হয় তা প্রতিরোধে এলাকাবাসীরা একতাবদ্ধ হয়ে যুবক বয়সের তরুণেরা রাত্রিবেলা লাঠি, বাঁশি বাজিয়ে তাদের এলাকা পাহারা দিয়ে থাকে। আমি ইতিপূর্বে ঢাকা, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ঠাকুরগাঁ ও বান্দরবান জেলায় চাকরি করার সুবাদে ওইসব জেলায় এইরকম ভলান্টিয়ার সার্ভিস চালু করে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছিলাম এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল।মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর আমিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সর্বপ্রথম এ ব্যবস্থা চালু করার কথা চিন্তা করি। প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের ভেতর থেকে তেমন একটা সারা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের বিট পুলিশিং সভা, কমিউনিটি পুলিশিং সভা, মত বিনিময় সভায় এ বিষয়টি সম্পর্কে তাদের বুঝানোর পর তারা পরবর্তীতে অত্যন্ত সাবলীলভাবে উক্ত স্বেচ্ছা পাহারা ভলান্টিয়ার সার্ভিসে অংশগ্রহণ করে।

আমরা তাদের হাতে বাঁশি এবং লাঠি উঠিয়ে দিয়েছি এবং বলেছি যখনি রাত্রিবেলা কোন দুষ্কৃতিকারী ক্যাম্প এলাকায় আসবে তখন যেন তারা বাঁশি বাজানো শুরু করে। এরপর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুষ্কৃতিকারীরা রাতে আর কোন দুস্ককর্ম করার সাহস পায়নি। মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেরকম ছিল এখন কিন্তু যথেষ্ট চোখে পড়ার মতো উন্নতি হয়েছে। যেমন আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাল,ডাল,তেল ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অবৈধ মজুদ কারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হতো না। আমি যোগদান করার পর অবৈধ মজুদ কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করার পর এবং আরো কিছু অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পর আগের তুলনায় ক্যাম্প এলাকায় এখন মাদক উদ্ধার হচ্ছে প্রচুর, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে প্রচুর, নারী নির্যাতন, অপহরণ, মানব পাচার এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ ও কিন্তু কমে গিয়েছে। আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন হত্যাকান্ড সংগঠিত হলে আসামিদের গ্রেফতার বা ডিটেকশন খুব কষ্টসাধ্য ছিল। বর্তমানে কিন্তু আমাদের ভলান্টিয়ারদের কল্যানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত যে কোন অপরাধের সাথে জড়িতদের আমরা অল্প সময়ের ভিতরই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হচ্ছি। আমরা এখন প্রকাশ্যে এবং গোপনে ভলান্টিয়ারদের যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি। ভলান্টিয়ারদের সহায়তায় আমরা মহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের অধিকাংশ আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি। তাছাড়া ৮ এপিবিএন এর আওতাধীন ক্যাম্প-১৪ তে সংঘটিত সিক্স মার্ডারের ঘটনার মূল আসামিকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করিয়েছি। কিছুদিন আগেও ৮ এপিবিএন এর আওতাধীন এলাকায় হেড মাঝি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একজন এজাহার নামীয় আসামিকে ও আমরা গ্রেফতার করেছি।বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় উক্ত পাহারা সার্ভিসটি “ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি”হিসেবে পরিচিত। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্প আমরা নাম দিয়েছি “ভলান্টিয়ার সার্ভিস স্বেচ্ছা পাহারা”।

উল্লেখ্য: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তথাকথিত বিভিন্ন গ্রুপের দুষ্কৃতিকারীদের সহ অন্যান্য অপরাধীদের ১৪ এপিবিএন পুলিশ শক্ত হাতে দমন করেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা এখন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না পাশাপাশি দুষ্কৃতিকারীরা তাদের অপরাধের শাস্তিও পাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে কোন অপরাধ সংগঠিত হলে ১৪ এপিবিএন পুলিশ দ্রুততার সাথে সকল আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হচ্ছে। তাছাড়া তথাকথিত আরসা দলীয় শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আম্মার জুনুনীর আপন ভাই শাহ আলী সহ আরসার বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকেও ১৪ এপিবিএন পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রতিরাতেই ব্যাটালিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সমস্ত রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ারদের সাথে দেখা করে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। স্বেচ্ছা পাহারা ভলান্টিয়ার সার্ভিস রোহিঙ্গাদের কাছে যত জনপ্রিয় হবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তত উন্নয়ন হবে।

১৪ এপিবিএন পুলিশ এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কান্ডারীর ভূমিকা পালন করছে। ইতিমধ্যে উখিয়া এবং টেকনাফের অন্যান্য ক্যাম্পগুলো ও এই “স্বেচ্ছা পাহারা ভলান্টিয়ার সার্ভিস”চালু করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে।