রোহিংগা ক্যাম্পে আগুনের বিভীষিকা!’স্যাবোটাজ’ নাকি নিছক ‘দূর্ঘটনা’?

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২১

 

এম আর আয়াজ রবি, (রোহিংগা ক্যাম্প, উখিয়া)

গত ২২শে মার্চ-২০২১ তারিখ, রোজ সোমবার। উখিয়া বালুখালী রোহিংগা ক্যাম্পের বাসিন্দারা সবে মাত্র যোহরের নামায শেষে, খাওয়া দাওয়া সম্পন্ন করে, অসহ্য গরমে চটপট করে একটু আরামের জন্য উদগ্রীব ছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে রোহিংগা ক্যাম্পের ৮ নং ব্লকে প্রথমেই আগুনের সুত্রপাত হয়ে ধ্বংশ লীলা শুরু করে ঠিক বিকাল বিকাল ৩ টার দিকে। নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে রোহিংগাদের বসবাসের জন্য তৈরিকৃত বিভিন্ন শেডে। দ্রুত আগুন ৮ নং থেকে ৯ নং ওয়ার্ডের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলীহান শিখায় পুড়ে যায়, রোহিংগাদের জন্য নির্মিত প্রায় ১০ হাজার শেড, সাথে স্থানীয়দের প্রায় দেড়শ বাসস্থান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রায় ৬০ হাজারের উপর রোহিংগা জনগোষ্টি ও প্রায় হাজারের উপরে স্থানীয় জনগোষ্টি ঘর হারা হয়ে পড়ে। মারা পড়ে অন্তত ৮ জন, আঘাত প্রাপ্ত হয় অনেকেই, ঘর ছাড়া হয়ে পড়ে হাজার হাজার লোক, আবালবৃদ্ধবনিতা নিমিষেই রিক্ত-নিঃস্ব হয়ে খোলা মাঠে অবস্থান করতে বাধ্য হয়। ক্ষয় ক্ষতির পরিমান যে কত হবে তা বলাই বাহুল্য! সাধারণ ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে ক্ষতির হুসাব নির্ণয় করা কঠিন হবে, সোপার ডুপার কম্পিউটারের সহায়তা প্রয়োজন হবে, বৈকি!

এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংগঠিত প্রজ্জ্বলিত আগুন, দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তা এক বড় প্রশ্ন। এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও সন্দেহ, অবিশ্বাস। অনেকে অনেক ধরনের বক্তব্য, মন্তব্য করেই যাচ্ছেন। কিন্তু আমি মনে করি, রাষ্ট্রযন্ত্রের এত এত গোয়ান্দা সংস্থার পদচারনা এতদঞ্চলে, তাদের দ্বারা সত্য উদঘাটন করা কোন বেগ পেতে হবে না। যে কারনেই সেই অগ্নিপাতের ঘটনা ঘটুক না কেন, অত্র প্রতিবেদক কিছু সম্ভাব্য কারন উপস্থস্পন করার চেষ্টা করেছেন মাত্র, যা অনুসন্ধানিৎসু মনেত কিছুটা খোরাক হিবে নিশ্চয়ই!

ইতিমধ্যেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক নেতা, নেতৃ ঘটনা স্থল প্রত্যক্ষ করে গেছেন।

স্থানীয়দের দাবি, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, ভাসানসরের মত আবাস স্থলের আশায়, কাঁটা তারের বেড়ার অপ্রয়োজনীয়তাকে প্রমান করার জন্যই জেনে, বুঝে ঠান্ডা মাথায় রোহিংগা সন্তাসী কর্তৃক ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে। আবার রোহিংগারা বলার চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশীরা রোহিংগাদেরকে ভাসানসর পাঠানোর ফন্দি হিসেবে এ আগুন সন্ত্রাসের সুত্রপাত করেছে। তবে তদন্ত কমিটির মাধ্যমেই আগুনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব।

উখিয়ার বালুখালীতে আগুনে পুড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বড় একটি অংশ বিরানভুমিতে পরিনত হয়েছে। চারপাশে কেবলই আগুনের পোড়া ছাই ও ধ্বংসস্তূপ।

তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ নিয়ে প্রশ্ন সবার। স্থানীয়রা জানান, ক্যাম্প ঘিরে রয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের লড়াই। অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি হারানোদের দাবি, এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়; একটি পরিকল্পিত ঘটনা।

মঙ্গলবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. অনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন এটি নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এর মতে, আগামী ৩ দিনের মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে বের করতে পারবে।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) এক টুইটার বার্তায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শাহরিয়ার আলম জানান, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্ঘটনায় কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল, ২৪ শে মার্চ, দুপুর ২টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেলিকপ্টারে যোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসেন। পরে বালুখালী ক্যাম্পে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সহায়তার আশ্বাস দেন।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারো ষড়যন্ত্র, দুরভিসন্ধি বা অবহেলা কিংবা দোষ থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। রিপোর্টে কারো দুরভিসন্ধি বা অবহেলা পাওয়া গেলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখবে সরকার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আজ বুধবার দুপুরে উখিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং র‍্যাব আয়োজিত ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন।

যেসব কারনে অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন তা পাঠকের জ্ঞাতার্থে নিম্নে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলঃ

১) সাধারণভাবে নিছক দূর্ঘটনা থেকেই এই আগুনের সুত্রপাত হতে পারে। তবে এর সম্ভাবনা কম, কেননা অনেকের ভাষ্যমতে একই সময়ে একাধিক উৎস থেকে আগুনের লেলিহান শিখা প্রত্যক্ষ করা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা মত দিয়েছেন।
২) রোহিংগারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষনের চিন্তা থেকে, কিছু দুষ্কৃতকারী ইচ্ছে করেই অত্র ঘটনা ঘটাতে পারেন।
৩) ) কোন কোন এনজিও তাদের নিম্নমুখী কাজের পরিধিকে উর্ধ্বমুখী করার জন্য এই কাজ করতে পারেন।
৪) রোহিংগারা বস্তি জীবন যাপন থেকে ভাসানসরের আদলে বসবাসযোগ্য আবাস স্থলের আশা থেকে অত্র ঘটনা ঘটাতে পারেন।
৫) রোহিঙ্গাদের মধ্যে সশস্ত্র দুই /তিনটি গ্রুপ রয়েছে এদের অন্তঃ কোন্দলে এই ঘটনা ঘটতে পারে।
৬) আবার রোহিংগাদের অনেকেই মনে করেন, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পিতভাবে এই আগুন কান্ড ঘটিয়েছে।
৬) কতিপয় রোহিঙ্গা মনে করছেন, কিছু শ্রেণির আশেপাশের স্থানীয় লোকজন এই আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। ( তবে এর সম্ভাবনা খুবই কম। এরা ক্যাম্পে গিয়ে আগুন লাগানোর সাহস পাবেনা)
৭) মিয়ানমার সরকারের লবিং বেশি শক্তিশালী বলে মিয়ানমার সরকারও এই আগুন লাগিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে বাংলাদেশেও রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং জীবন যাপন বিষাদময় হচ্ছে।
৮) রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোন দুষ্কৃতিকারী যদি কোন কোন রোহিঙ্গা পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে।
৯) রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিকভাবে বড় সড় সাহায্য সহযোগিতা পাবার আশা থেকে এই আগুন লাগাতে পারে।
১০) রোহিংগা ক্যাম্পে রোহিংগাদের একচেটিয়া বাণিজ্ ও আধিপত্য বিস্তার করার হীন মনমানসিকতা থেকে অত্র ঘটনা ঘটাতে পারেন।
১১) রোহিংগা সমাস্যার আন্তর্জাতিকভাবে ভিন্ন রুপ দেবার মানসিকতা থেকে অত্র ঘটনা ঘটাতে পারেন।
১২) মায়ানমারে রোহিংগারা একপ্রকার বন্ধী জীবনে ন যাপন করতে অভ্যস্ত ছিল, বাংলাদেশে এসে দেশীয় আন্তর্জাতিক সহানুভূতির সুযোগে একপ্রকার স্বাধীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, এই দূর্বলতার সুযোগে রাজ্য জয়ের হীন মানসিকতা থেকে অত্র আগুনের বিস্তার
১৩) বিবিধ কারন

উপরোক্ত বিভিন্ন কারনের মধ্য থেকে যেসকল কারনেই জক্ত আগুনের সুত্রপাত হোক না কেন, রোহিংগারা আমাদের উপর গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া হয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের উপর যে মারাত্মক হুমকি তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

সীমান্তবাংলা/ শা ম/ ২৫ মার্চ ২০২১