যুগান্তর অফিস বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিলেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা!

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২২

 

ডেস্ক নিউজ ;
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী নবী হোসেনের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তর কার্যালয় বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ‘বাংলাদেশের ভেতরে স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আনছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’ শিরোনামে ৩০ এপ্রিল যুগান্তরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এ প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে হাজার কোটি টাকার অস্ত্র চালান আনার চেষ্টাকারী মূলহোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের পক্ষ থেকে এ হুমকি দেওয়া হয়।

নবী হোসেনের উপদেষ্টা সৌদি প্রবাসী রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ কবির হোসেনকে উদ্দেশ করে অডিও বার্তায় বলা হয়, ‘সংবাদটির বিষয়ে লিডার নবী হোসেন আপনাকে চিন্তা না করতে নিষেধ করেছেন। লিডার বলেছেন, প্রয়োজনে যুগান্তর পত্রিকা অফিস বোমা মেরে তছনছ করে দেওয়া হবে। তিনি একটু অসুস্থ। আমার পাশেই আছেন, আপনাকে ওই বিষয়ে চিন্তা না করতে বলেছেন।’ রোহিঙ্গাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নবী হোসেনের বরাত দিয়ে তার এক মুখপাত্র অডিও বার্তায় বোমা হামলার হুমকি দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মুখপাত্রের হুমকির অডিও বার্তা সংরক্ষিত রয়েছে।

এ ছাড়া আরেকটি অডিও বার্তায় নবী হোসেনের চাচাত ভাই চট্টগ্রামে বসবাসকারী কুকু লিংও যুগান্তর পত্রিকাকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে হুমকি দিয়েছেন। হুমকির বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি যাচাই করছেন। যুগান্তরে প্রকাশিত তথ্যবহুল অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নবী হোসেন ও মাস্টার মুন্নাসহ নেপথ্যে থাকা আরও কয়েকজনের নাম উঠে আসে। এ নিয়ে প্রশাসনেও তোলপাড় চলছে। বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এগুচ্ছে।

সূত্র জানায়, পাশের একটি দেশ থেকে অত্যাধুনিক বিশাল অস্ত্র চালান আনার চেষ্টা করছে নবী। উখিয়ার ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা নবী বাহিনীর কাছে অর্ধশতাধিক ভারী ও অত্যাধুনিক অস্ত্র এসেছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি যাচাই ও করণীয় নিয়ে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১৪ আর্মড পুলিশের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক বলেন, নবী হোসেন ও মাস্টার মুন্না দুজনই বড় মাপের সন্ত্রাসী ও মোস্ট ওয়ান্টেড। যুগান্তরের প্রতিবেদনের পর তাদের ধরার জন্য আরও বেশি গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের মিয়ানমারে চলে যাওয়া বা ক্যাম্পে আত্মগোপন করার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি। ২২নং ক্যাম্পে অস্ত্র প্রবেশের তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। যুগান্তর অফিসে বোমা হামলার হুমকির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে বলেও তিনি জানান।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার অস্ত্রগুলোর মধ্যে কোনো বিদেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র নেই। সবই দেশীয় তৈরি। তবে আমরা তথ্য পেয়েছি-নবী ও মুন্না বিদেশ থেকে অস্ত্রের চালান আনার চেষ্টা করছেন। আমাদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরস্ত্রীকরণ ও সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যুগান্তর অফিসে বোমা হামলার হুমকির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। কাছের থানায় সাধারণ ডায়েরি করারও পরামর্শ দেন তিনি।

সংবাদ প্রকাশের পর নবী ও মুন্না মিয়ানমারে চলে যাওয়ার গুঞ্জন : সূত্র জানায়, যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়ার ভয়ে ঈদের আগের দিন রাতে মিয়ানমারে চলে গেছেন নবী হোসেন ও মাস্টার মুন্না। নবী আগে থেকে ক্যাম্পের বাইরে সীমান্ত এলাকায় তোতার দ্বীপে অবস্থান করছিলেন। তবে মুন্না রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। মুখপাত্রের অডিও বার্তায় দাবি করা হয়-নবী ও মুন্না ক্যাম্পের একজন ক্যাম্প ইনচার্জের সহযোগিতায় মিয়ানমারে চলে গেছেন। বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটি সূত্রের দাবি-মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইঙ্গিতে কৌশলগত কারণে তারা পালিয়ে গেছে। প্রশাসনের পরিস্থিতি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবারও বাংলাদেশে ফিরবেন।

সুত্র; দৈনিক যুগান্তর