মহেশখালীর সাদ্দামের নির্মম প্রবাস জীবন ঘাতক বদি আলমের নিমর্ম আচরণ। 

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২১
শওকত আলমঃ
স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হবে।  প্রবাস মানে বিদেশ বা দূরদেশ, প্রবাস মানে আত্মীয়স্বজন বিহীন বছরের পর বছর একাকী কাটিয়ে দেয়া, প্রবাস মানে দেয়ালবিহীন কারাগার, প্রবাস মানে শত দুঃখ কষ্টের সঙ্গে বিরামহীন জীবন যুদ্ধ করা। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় জীবিকার তাগিদে অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে দেশান্তরী হয়।
মানব পাচারকারী বদি আলমের নির্মম অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকারে সাদ্দামের জীবনের আলো প্রায় নিভু নিভু অবস্থায় অর্ধ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
বয়স্ক কৃষক বাবার কষ্ট লাঘব করতে নিজের জীবেনর সুখ শান্তি স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে আত্মীয় স্বজন সকলের পরার্শক্রমে পাড়া প্রতিবেশি / আপন জন থেকে ধার নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমায় বিগত ২৭/১১/২০১৭ তারিখ। একটু সুখের আশায় কঠিন সিদ্ধান্তই আজ ভয়ংকর মর্মান্তিক কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানার দক্ষিণ নলবিলা গ্রামের আব্দুল গফুরের পুত্র সাদ্দামের জীবন। মানুষ রূপী অ-মানুষ মানব পাচারকারী, আদম বেপারী ধোকাবাজ, ঠকবাজ একই মহেশখালী থানার সিপাহী পাড়া গ্রামের বদ মিয়ার পুত্র বদি আলমের লোভীয় অফার ও খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃশ্ব সাদ্দামের পরিবার।
কিছু প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সাদ্দামের অভিভাবকদের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয়। শুধুমাত্র ভিসার টাকা টাই সম্পূর্ণভাবে আদায় হয়েছিল। বদি আলমের পক্ষ থেকে অন্যান্য শর্ত কিছুই পালন করা হয়নি।
ভিসার চুক্তি :
ভিসার দাম ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ভিসা হওয়ার পর বাংলাদেশেই সব টাকা পরিশোধ।
ভিসার ধরণ : চুক্তি মোতাবেক দেওয়ার কথা ছিল মোয়াচ্ছা ভিসা।
নিজ ইচ্ছা মোতাবেক কাজ করতে পারার সুযোগ
সৌদিতে পৌছা-মাত্রই কপিল এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইকামা গ্রহণ। কপিলের মাধ্যমে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করণ…
সাদ্দামের সৌদিতে প্রবাস জীবন শুরু…..
প্রথম দিন থেকেই  সাদ্দাম বদি আলমের অধীনে কাজ করতে থাকে, ২০ দিন অতিবাহিত হলে সাদ্দাম কপিলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার আকুতি জানায় বদি আলম কে। পরিচয় করিয়ে দেয়ার আশ্বাসে দীর্ঘ  তিন মাস অতিবাহিত হলেও কপিলের সাথে সাক্ষাতে সুযোগ মিলেনি। পরিশেষে  সাদ্দাম তার সহ-কর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারল যে সাদ্দামের ভিসা বাতিল হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সাদ্দাম বার বার বদি আলমকে অবহিত করলে প্রথমে সে অস্বীকার করতে থাকে পরে চাপের মুখ পড়ে স্বীকর করতে বাধ্য হয় যে ভিসা বাতিল হয়েছে।
সেই দিন থেকেই সাদ্দামের জিন্দা লাশের সূচন।..
যখন সাদ্দাম অবৈধ। সে আর স্বাধীন চলাফেরা করতে পারে না, সৌদি পুলিশের নজর থেকে নিজেকে রক্ষার তৎপরতা, এবার বদি আলমের দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল বুনন …. সাদ্দামের কোন উপায় নেই অন্য কোথাও যেয়ে কাজ করার। তার অধিনে থাকতে বাধ্য.. তার মনের মত ধার্য্যকৃত টাকায় তার দিনের বেতন। গরীব, কৃষক বাবার , পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করে.. চালিয়ে যায় তার বন্দি জীবন। করতে হয় এমন ও কাজ যা তার শক্তি সাহসের বাহিরে। কিছু করার নাই, কারণ ধোকাবাজ, ঠকবাজ ঘাতক বদি আলমের হাতে বন্ধি।  হায়! প্রবাস জীবন এখন ও তার কর্য পরিশোধ হয়নি. এভাবে ৩ টি বছর অতিক্রম করেছে।
গত ৩১/০১/২০২১ তারিখ বদি আলমের নেতৃত্বে  নতুন কাজের জন্য শ্রমিক সাদ্দাম সহ  ০৫/০৬ জনের একটি দল নিয়ে রওয়ানা হয়. কাজ চলাকালীন ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। তৃতীয় তলা থেকে বিদ্যুতের শক খেয়ে নিচে পড়ে যায় , আবার নিচে ২২ হাজার ভোল্টজের তারের উপর পড়ে সাদ্দামের বুকের অংশ পুড়ে যায়…হাত পা ভেঙ্গে যায়… অজ্ঞান হয়ে যায়, সাথে সাথে সৌদি জার্মান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই করুণ অবস্থার প্রথম দিনে ঘাতক বদি আলমের দেখা মিললেও পরবর্তীতে পালিয়ে যায়।
জার্মান হাসপাতালে প্রথম দিন থেকে — ২ মাস ১০ দিন যাবৎ কোমা/ লাইফ সাপোর্টে ছিল.
তখন ও জ্ঞান ফিরে নি… কোমরে মেজর অপারেশন, পায়ের অপারেশন, ঘাড় ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি। এ যাবৎ আর কোন দিন বদি আলমের দেখা মিলেনি।..
বাংলাদেশ থেকে সাদ্দামের পরিবার অনেক বার চেষ্টা চালিয়ে কোন লাভ হয়নি।..
পরিশেষে বদি আলমের পরিবারের লোকদের হাতে-পায়ে ধরে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু তাতে ও কোন লাভ হয়নি।
সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা ও মা বাবার দোয়ায় গত ২৮/০৬/২০২১ তারিখ সাদ্দামের জিন্দা লাশ দেশে ফেরত আনা হয়েছে। বর্তমানে ভারসাম্যহীন এবং অচল অবস্থায় মানবিক জীবন যাপন করছে।
এভাবে বহুজন কে এই বদি আলমের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অনেকেরই ভিসা নষ্ট করে দিয়েছে। অনেকে অন্য জায়গায় পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচে, অনেকে নিজ বাড়িতে চলে আসে। এরি মধ্যে বদি আলম বউ বাচ্চা কে সৌদি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার প্রতিরোধ করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। এই জঘন্য অপরাধী কে বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে এনে ন্যায় বিচার করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ গুলোর ক্ষতিপূরণ পোষিয়ে দিতে আইনানুগ  ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সীমান্তবাংলা / ৬ জুলাই ২০২১