বাঁশখালীতে দুদকের মামলায় সার্ভেয়ার মাওলা কারাগারে

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩

আলমগীর ইসলামাবাদী বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
দুদকের মামলায় বাঁশখালীর দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার আমাতুল মাওলাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত। তার বিরুদ্ধে দুদকের করা ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা আত্মসাত মামলা ছাড়াও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এই সার্ভেয়ার বাঁশখালীতে দীর্ঘ দিন ধরে কর্মরত থেকে জনগনের কাছ থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, বাঁশখালী ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. আমাতুল মাওলা অন্যত্র দুইবার বদলী ঠেকানোর পরও ১ কোটি ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে দুদকের দায়ের করা মামলায় দুই সহযোগীসহ জেল হাজতে গেলেন। এদিকে, সার্ভেয়ার জেল হাজতে যাওয়ায় বাঁশখালী ভূমি অফিসের সেবা গ্রহীতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেবা গ্রহীতারা নতুন সার্ভেয়ার নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

বাঁশখালী ভূমি অফিস সুত্র জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় নিম্ন আদালতে হাজির হতে গেলে বিজ্ঞ আদালত সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এলএ শাখা থেকে বদলী হয়ে গত ৩ বছর যাবৎ বাঁশখালী কর্মরত রয়েছে সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলা। বাঁশখালী ভূমি অফিসে থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী স্বাক্ষরিত ২২ সালের ২৩ মার্চ স্মারক নং- ০৫.৪২.০০০০.০২১.৩০.০০১.২১ কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসে বদলির আদেশ দেন। বিভিন্ন স্থানে তদবির করে বদলি ঠেকান তিনি। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর একই অফিস আদেশে স্মারক নং- ০৫.৪২.০০০০০২১.৩০.০০১২১.৬৮৭ পুনরায় পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের বদলি করেন। এ আদেশও উপেক্ষা করে বাঁশখালীতে বহাল তবিয়তে থেকে যান সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলা। বাঁশখালী থেকে তাকে একাধিক বার বদলি করা হলেও অবৈধ তদবীরের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার মওলা বদলি ঠেকিয়ে বহাল তবিয়তে থেকে যান। তার বিরুদ্ধে বাঁশখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আমিরাঘোনা এলাকায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূল তথ্য দিয়ে গরীব জনগনের বসতভিটা জবর দখল, ঘরবাড়ি ভাংচুর ও গাছপালা কেটে সাবাড় করার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অথচ পাশে ধনিদের জায়গা সংরক্ষিত রেখে গরীবের লোকজনকে উচ্ছেদ করার ভূল পরামর্শ দেন এই সার্ভেয়ার। ফলে দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ারের কারণেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা হয়।
সুত্র আরো জানায়, নগরীর উত্তর পতেঙ্গা মৌজায় ২৩ শতক ভূমির মালিকানা কাগজপত্র তৈরি করে অভিযুক্ত তিনজন সার্ভেয়ার। এর মধ্যে বাঁশখালীতে কর্মরত সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলা, চট্টগ্রাম এলএ শাখার সার্ভেয়ার মুজিবুর রহমান ও রাঙ্গুনিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আশীষ চৌধুরী অভিযুক্ত হন। অভিযুক্ত আসামীরা হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়ে নিম্ন আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন।
গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেসার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলাসহ ৩জনকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
দুদকের পিপি মাহমুদুল হক জানান, দুর্নীতি মামলায় চট্টগ্রাম এলএ শাখার তৎকালীন কর্মরত সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলা, মুজিবুর রহমান ও রাঙ্গুনিয়ায় কর্মরত সার্ভেয়ার আশীষ চৌধুরী হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন পান। তাদেরকে মেয়াদ শেষে নিম্ন আদালতে জামিন চাইতে নির্দেশ দেন। আদালতে জামিন চাইতে গেলে দুদক বিরোধিতা করে। এ মামলায় অভিযোগ তিনজনই জেল হাজতে গেছেন।
এদিকে, বাঁশখালী ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলা অফিস কক্ষে কতিপয় দালাল ও ভূমি অফিসের কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে সার্ভে কাজসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে দুর্নীতি আশ্রয় নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভূমি অফিসের কিন্তু চিন্হিত দালাল অভিযানকালীন সময়ে গোপনে থেকে অভিযান শেষে আবার প্রকাশ্যে এসে দালালি কাজ করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী জানান, সার্ভেয়ার মো. আমানাতুল মাওলা দীর্ঘ দিন যাবৎ বদলি অবস্থায় রয়েছেন।
তিনি জেল হাজতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এ দায়িত্ব চালিয়ে নেয়ার মাধ্যমে অফিস চলমান রাখার জন্য ব্যবস্থা চলছে।