প্রেক্ষাপটঃ তৈল বিদ্যার তেলেসমাতি–যার প্রভাবে বর্তমান পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ত্রাহি ত্রাহি ভাব!

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২২

 

(এম আর আয়াজ রবি)

ইদানিং দেখা যায় এক একজন তোষামোদকারী তেল বা তৈল বিদ্যায় গ্রাজুয়েট নয়, মাস্টার্স ও পিএইচডি হোল্ডারও বটে! কত সুনিপুণভাবে তৈল বিদ্যার প্রয়োগ ঘটায় তা বলাই বাহুল্য। এ প্রসঙ্গে পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী’র উক্তিটা আওড়ানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। তিনি বলেন, ‘ তেলবাজি শেখানোর জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলেছিলাম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সমাজ এবং রাষ্ট্র (তেলবাজি রোগে) এ মহামারীতে এমনভাবে আক্রান্ত যে, এনাদের এখন তেলবিদ্যার শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রয়োজন নেই। এনারা এই কর্মে এমনটাই পারদর্শী যে, এনারা নিজেরাই এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘।

তেল মাথায় তেল দেওয়া আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র পর্যন্ত বিরাজমান এক মহামারীর নাম। বংকিম চন্দ্র কিন্তু ইহাকে রোগ বলেই সাব্যস্ত করেছেন। এটি এখন কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাসকেও হার মানিয়েছে। যুগে যুগে প্রতিটি শতাব্দীতে এক একটি মহামারী মনুষ্যকুলকে পর্যুদস্ত করে ছেড়েছে। এক একটি ভাইরাস কত লক্ষ কোটি মানুষের জীবন হরণ করেছে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের বদৌলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেই ভাইরাস ও মহামারীর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবার কারনে এই মানব সমাজ হাফ ছেড়ে বেঁচেছে! কিন্তু তৈলবাজির মহামারীর প্রতিষেধক এ পর্যন্ত আবিষ্কার না হওয়ায়, তা যেন দিনকে দিন, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ছাড়িয়ে বৈশ্বিক মন্ডলে পরিব্যাপ্তি ঘটেছে। এই তৈল বিদ্যায় সিদ্ধহস্ত হয়ে সমাজনীতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি প্রভাবিত হচ্ছে। এটি এখন বৈশ্বিক মহামারীতে রুপলাভ করেছে। এখান থেকে নিস্তার না পেলে সত্যিকারের সামাজিক ন্যায় বিচার, সাম্য, সমতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভবপর নয়।

বর্তমান সমাজে তেলবাজি যেন এক বাড়তি যোগ্যতা। শতবর্ষ পুর্বে পন্ডিত হরিপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছিলেন, ” বাস্তবিক তৈল সর্বশক্তিমান, যাহা বলের অসাধ্য, বিদ্যার অসাধ্য, ধনের অসাধ্য ও কৌশলের অসাধ্য- তাহা কেবল তৈল দ্বারাই সম্ভব”।

‘তেল মাথায় ঢাল তেল শুকনো মাথায় ভাঙ্গ বেল’-জ্যোতিবিদ্যায় পারদর্শী বিদূষী নারী খনার বচন।

বর্তমান আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায়-
তেল মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্য জাতির একটি জটিল রোগ। “এখানে যেন দারিদ্যের ক্ষুধা কেহ বুঝে না। যে খাইতে বলিলে বিরক্ত হয় তাদের জন্য রাজ্যের শত ভোজের আয়োজন করে- আর যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহবানে তোমার অন্ন খাইয়া ফেলে, চোর বলিয়া তাহার দন্ড কর, ছি ছি”- বংকিম চন্দ্রের কমলা কান্তের দপ্তর।

তাই তৈল বিদ্যার নিস্তার না হলে, তৈল বিদ্যার লাগাম না টানলে, তৈলের মুল্য হু হু করে বাড়তেই থাকবে। বর্তমানে তৈলের প্রতি লিটার দুই কম দুইশত টাকা কিন্তু যেভাবে তেলের মালিশ চলছে, তেলের চর্চা চলছে- অদূর ভবিষ্যতে এটার মুল্যের উর্ধ্বগতি কোথায় গিয়ে ঠেকে একমাত্র আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। তাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বিখ্যাত তোষামোদ কবিতায় লিখেছিলেন, ” চমৎকার তো হতেই হবে, হুজুরের মতে অ-মত কার”?
ধন্যবাদ সবাইকে।
mail: ayaz.robi@ gmail.com. Cell # 01815850817