প্রতি পদে ভোগান্তি তবু বাড়ি ফিরতে মরিয়া

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২১

সীমান্তবাংলা ডেক্স : মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউন তথা বিধিনিষেধের মধ্যে ঈদ সামনে রেখে মানুষের মধ্যে বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। মরিয়া এই যাত্রীরা নানা কৌশলে ছাড়ছেন রাজধানী।

গণপরিবহন না চললেও অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস আর প্রাইভেট কার ভাড়া করে গ্রামের দিকে ছুটছেন অনেকেই। কেউ কেউ পিকআপ ভ্যানে করেও ঢাকা ছাড়ছেন। গত দুদিন ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার এমন দৃশ্যই নিয়মিত দেখা মিলছে।

বিশেষ করে দেশের দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পথে মানুষের যেন ঢল নেমেছে। আর সেই ঢল গিয়ে জমায়েত হচ্ছে পদ্মার তিন ঘাটে। ফেরি পেলেই লাফিয়ে উঠার খবরও এসেছে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

অন্যদিকে ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর সড়কেও মানুষ আর গণপরিবহনের চলাচল অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারির আশঙ্কা আর ভয় যেন মানুষের কাছে একেবারেই উপেক্ষিত।

ঘরে থাকা আর সামাজিক দূরত্ব মানার পরিবর্তে শুরু হয়েছে অবাধ চলাচল। নির্বিচারে মানুষের চলাফেরায় ঈদের পর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা থেকে চাঁদপুর গেছেন রবিউল ইসলাম। করোনা মহামারির কারনে লঞ্চ বন্ধ থাকায় কৌশলী হতে হয়েছে তাকে। ঢাকা থেকে বাড়ি পৌঁছাতে পাঁচবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। এতে করে বাড়ি পৌঁছাতে তাকে খরচ করতে হয়েছে ৮৩০ টাকা। যদিও সাধারণ সময়ে খরচ হয় ২৫০ টাকা।

রবিউল জানান, লঞ্চ বন্ধ থাকায় স্পিডবোর্ডে নদী পার হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় করে ধাপে ধাপে বাড়িতে পৌঁছেছেন তিনি। এতে করে তার খরচ হয়েছে চারগুণ।

এদিকে আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানীর গাবতলী, গুলিস্থান, আব্দুল্লাহপুরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে মানুষকে। আন্তঃজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা।

কেউ কেউ কোনো গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। আবার কেউ কেউ যাচ্ছেন ব্যক্তিগত পরিবহনে। এক্ষেত্রে একই জেলার কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করছেন, আর তাতে করেই রওনা হচ্ছেন বাড়ির পথে। এক্ষেত্রে সবাই মিলে ভাড়া বহন করছেন।

ঢাকা আরিচা মহাসড়কে শনিবার সকাল থেকেই ছিল বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী পিকআপ ভ্যান, ট্রাকে করে মানুষকে বাড়ির উদ্যেশে রওনা হতে দেখা গেছে। কেউ কেউ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন পায়ে হেঁটে।

ঢাকা-চট্টগ্রামে মহাসড়কের চিত্রও একই। করোনা মহামারির কারণে সকল আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবুও ঈদকে সামনে রেখে বাড়ি ফেরার তাড়না যেন মানুষের পিছু ছাড়ছে না। এ মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনকেও যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।

দক্ষিণের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি ঘাটে শুক্রবার ভিড় সামলাতে হিমশিম খাওয়ার পর মধ্যরাতে দিনের বেলা ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। শুধু রাতে পণ্যবাহী যানবাহন পারাপারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে শনিবার সকাল থেকে ঘাটগুলোতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন নদী পারাপারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কোনো ফেরি, লঞ্চ বা স্পিডবোট না ছাড়ায় বিপাকে পড়েন এসব মানুষ। এর মধ্যে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যান পারাপারে একটি ফেরি পাটুরিয়া ঘাটে ভেড়াতে গেলে যাত্রীরা দৌড়ে সেখানে ওঠার চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সবধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরি বন্ধ রাখায় উভয় ঘাটে গাড়ি আটকা পড়েছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে অনেক জরুরি গাড়ি জমা থাকলে বিশেষ বিবেচনায় মাঝেমধ্যে ছোট এক-দুটি ফেরি ছাড়তে পারি।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সকাল ছয়টা থেকে ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘাটে যেকোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। এ আশঙ্কায় ঘাট থেকে সব ফেরি অন্যত্র সরিয়ে রেখেছি। শুধু একটি ছোট ফেরি দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় রোগী, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পার করছি।

একই চিত্র দেখা গেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটেও। সেখানে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল নামে। গতকাল ভোর থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে ঘাট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। যাত্রীর চাপে হিমশিম খেতে হয় ঘাট কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে একটি ফেরি মাদারীপুরের শিবচর অভিমুখে ছাড়তে দেখা যায়।

তবে সকাল থেকে ঘাট এলাকায় কোনো যানবাহন ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। ফলে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেই ঘাটে পৌঁছান যাত্রীরা। ফেরি বন্ধ থাকার খবর শুনে নিরুপায় ঘাটে অপেক্ষা করছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার ফিরছেন রাজধানীর পথে।

এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, খোলা ট্রাক, বাস যা পাচ্ছেন তাতে করেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন ঘরমুখো মানুষ। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে টাঙ্গাইলের মহাসড়কে বেশ কয়েকটি বাস চলাচল করতেও দেখা গেছে। তবে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের দাবি, লোকাল বাস ছাড়া মহাসড়কে কোন দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে না।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ঘারিন্দা, কান্দিলা, রাবনা বাইপাস, বিক্রমহাটি, রসুলপুর ও এলেঙ্গা অংশে দূরপাল্লার বাসসহ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া মানুষজন বাড়ি পৌঁছাতে মাছের ট্রাকে করেও ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী বেশকিছু দূরপাল্লার বাস বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানা পুলিশ আটকিয়ে রাখলেও সেগুলো সকালে ছেড়ে দিয়েছে। এতে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েছে শতাধিক যাত্রীবাহী বাস।

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার পরিবহন পারাপার হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ হাজার ব্যক্তিগত পরিবহন রয়েছে। এছাড়া যাত্রীবাহী রয়েছে দেড়শ। বাকি ছোট-বড় ট্রাক সেতু পারাপার হয়েছে। এতে সেতুতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ

০৮মে/ডিএম/এডমিন/ইবনে যায়েদ

সংবাদটি শেয়ার করুন