নিভৃত পল্লীর উদীয়মান তানভীর খেলবে জাতীয় ক্যাম্পেইনে

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২১
{“uid”:”88C09FFC-4710-4C38-AC16-83A74253918F_1623505430281″,”source”:”other”,”origin”:”gallery”}

নূরে আলম সিদ্দিকী নূর, বিরামপুর : দিনাজপুর জেলার বিরামপুরের সীমান্তঘেঁষা এক নিভৃত পল্লীতে তার বেড়ে উঠা। বাড়ির সামনে দিয়ে হাজারও বিপদগামী যুবকের যাওয়া-আসা।

ঘরে পড়ার টেবিলে বসে জানালা দিয়ে সব দেখা যায় কতজন যুবক মাদকের নেশায় সীমান্তে আসছে আর যাচ্ছে। তার সমবয়সী অনেক যুবক এখন মাদকের নেশায় হাবুডুবু খাচ্ছে। নষ্ট হতে যাওয়া সমাজে বিবেকের সাথে অনেকটাই যুদ্ধ করে নিজেকে রক্ষা করে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, নিজে ও তার সমমনা বন্ধুদেরকে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ও বিপদগামী যুবকেরদের নেশা নিতে বারণ করেছেন। অল্পবয়সী ছেলেটির প্রতিবাদে অনেকেই পাত্তা দেননি।

নিজেও গা ভাষাননি নেশার ¯্রােতে। আর এভাবে ¯্রােতের বিপরীতে হাঁটতে গিয়ে লেখাপাড়ার অবসরে বাড়ির সামনে খুলিতে ও গ্রামের স্কুল মাঠে ক্রিকেট ব্যাটের সাথে সময় পার করেছেন। মাঠে খেলার সঙ্গী ক্রিকেট বোলার যখন বিপরীত দিকে তার দিকে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে বল ছুড়েছেন- ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের সমাজটাকে মাদক নামক অপশক্তিকে দূরে ফেলার স্বপ্নে হাতে থাকা শক্ত ব্যাট দিয়ে আঘাত করেছেন গোল মারুতি বলে। ব্যাটের আঘাতে বল মাঠের শেষপ্রান্তে পৌঁছেছে। মাঠে কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুদে দর্শকদের মুখে উচ্চারিত হয়েছে ছক্কা! উচ্চারিত হয়েছে- সাবাস জয় সাবাস! মাঠে ক্ষুদে দর্শকদের এ বাহবা আজ তাকে “প্রতিভাবান ক্ষুদে ক্রিকেটারের সন্ধানে বাংলাদেশ” এর ক্রিকেট ট্যালেন্ট হান্ট-এ রংপুর বিভাগীয় বাছাই পর্বে চূড়ান্ত করেছে। তিনি এখন ক্রিকেট ট্যালেন্ট হান্ট এর জাতীয় ক্যাম্পেইনে খেলবেন ।

তানভীর আহম্মেদ। ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্র্তী দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের শাহ্পাড়ায় জন্ম। স্কুল শিক্ষক জালাল উদ্দিন এর পরিবারে একমাত্র সন্তান। তানভীর বর্তমান দিনাজপুর কেবিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন।

সারাদেশ থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় লেভেলে উত্তীর্ণদের ক্ষুদে থেকে পরিণত এবং প্রফেশনাল ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার সুপরিকল্পনা নিয়ে “প্রতিভাবান ক্ষুদে ক্রিকেটারের সন্ধানে বাংলাদেশ” (চকঈঝইউ) ক্রিকেট ট্যালেন্ট হান্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ৬ জুন রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট গার্ডেনে অনুষ্ঠিত উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ও ৮ জুন বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রিকেট ট্যালেন্ট হান্ট-এ “গ্রæপ-সি” থেকে ব্যাটসম্যান খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি জাতীয় ক্যাম্পেইনে খেলার চ‚ড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন তানভীর আহম্মেদ।
জাতীয় ক্যাম্পেইনে তানভীর এর খেলার চান্স পাওয়ার সুসংবাদে তার পরিবার ও গ্রামের বন্ধু-বান্ধব মহলে চলছে আনন্দের বন্যা। গ্রামের মানুষ স্বপ্ন দেখছেন- তানভির একদিন অনেক বড় ক্রিকেটার হবেন। এলাকার মানুষের মুখ উজ্জ্বল করবেন। তাকে দেখে এলাকার বিপদগামী যুবকরা আলোর পথে ফিরে আসবে।

তানভীরের বন্ধু এম আর হৃদয় খান বলেন, “ তানভীরের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। তার স্বপ্ন- সে একদিন জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলবে। সে সবসময় ক্রিকেট নিয়ে ভাবত। আমাদের সেই কাটলা হাইস্কুলের ছাত্র একটা ছোট্ট ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পর্যায়ে উঠে যাওয়া ছিল স্বপ্নের মত। স্বপ্নটা যতই বড় হোক না কেন চেষ্টা করলে তা পূরণ হয়। আর সেটি আমাদের বন্ধু তানভীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সে তার কঠোর পরিশ্রমে ঢাকাতে জাতীয় ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়েছে।”

কথা হল তানভীর আহম্মেদ এর সাথে। তানভীর বলেন, “ক্রিকেট আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট হই। দক্ষ ক্রিকেটার হওয়ার পিছনের আবার বাবার সহযোগিতা ও আমার বন্ধুদের উৎসাহ আমাকে এ পর্যন্ত এনেছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন ভালো ক্রিকেটার হতে চাই। আশা করছি, জাতীয় ক্যাম্পেইনে ক্রিকেট ট্যালেন্ট হান্ট-এ খেলার মাধ্যমে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাব।

তানভীরের আরও বলেন, ক্রিকেট খেলার মাধ্যমেই আমি আমার সীমান্ত এলাকার তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে ফিরে আনতে চাই। তাদেরকে আলোর পথে ফেরাতে পারলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।

সীমান্ত বাংলা ডেস্ক।১২ জুন।ই যা

 

সংবাদটি শেয়ার করূন