নরসিংদীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবক নিহত

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২২

মো: খায়রুল ইসলাম :
নরসিংদীর রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তরুণ সিফাত উল্লাহ ওরফে সবুজের (২০) লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর লাশ হস্তান্তর করে রায়পুরা থানা–পুলিশ।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ২২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আজ বেলা ২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল রাতভর অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আটক ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।

এর আগে গত রোববার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন সিফাত উল্লাহ। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিফাত উল্লাহকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিফাত উল্লাহ রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে। সিফাত বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসান ওরফে জাকিরের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক।

আজ বেলা একটার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের সঙ্গে সিফাত উল্লাহর মা পারুল বেগম ও ছোট ভাই রাফিন আহমেদ লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন। বেলা দেড়টার দিকে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে রায়পুরা থানার পুলিশ। এরপরই অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তুলে নিয়ে রায়পুরার বাঁশগাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন স্বজনেরা।

পারুল বেগম বলেন, ‘শুধু এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্যই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হকের নির্দেশে তার কর্মী–সমর্থকেরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে, আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। গত ইউপি নির্বাচনের আগে থেকেই চেয়ারম্যান রাতুল হাসানের সঙ্গে আশরাফুল হকের দ্বন্দ্ব চলছিল। আমার ছেলে রাতুল হাসানের সমর্থক—শুধু এই কারণেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যারা আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের আসামি করে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নটিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসানের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তাঁদের সমর্থকেরা প্রায়ই টেঁটা-বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফুল হকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাতুল হাসান। নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত ২ পক্ষ অন্তত ১০ বার সংঘর্ষে জড়ায়। সম্প্রতি মির্জারচর ইউপির চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ওই উত্তেজনার মধ্যে আজ দুপুরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে খবর পেয়ে রায়পুরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যান রাতুল হাসানের পক্ষের সমর্থকদের সরিয়ে দেয়। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হকের সমর্থকেরা প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়ালে সিফাত উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।

বক্তব্য জানতে আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসানের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে অন্তত ১০ বার করে কল দেন এই প্রতিবেদক। তবে তাঁদের দুজনের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। দুজনের নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, নিহত তরুণের লাশ মর্গ থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ দাফনের পর তাঁরা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রাতভর অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করা হয়েছে।