ঢাকার অ‌ভিজাত এলাকাগু‌লো‌তে মাদক আই‌সের বিস্তার

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১

সীমান্ত বাংলা ডেস্ক : ঢাকার অভিজাত এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মেথামফিটামিন মাদক ‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ এর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। অধিকাংশ উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের একটি চক্র আইসের এ শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বলে দাবি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের

শনিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর ৪৪১ তেজগাঁওয়ের ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভয়ঙ্কর মাদক আইসের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, আইসের সক্রিয় চক্রটি রাজধানীর বনানী, উত্তরা, বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় ‘আইসের’ শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। একমাস আগে একটি মোবাইল নম্বরের সূত্রে এই সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রায় এক মাসের অনুসন্ধান শেষে শুক্রবার (২১ আগস্ট) বিকেল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইজন নারীসহ আইস চক্রের সক্রিয় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের কেউ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, কেউবা একাধিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মালিক। এর মধ্যে দুই জন মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

ফজলুর রহমান বলেন, মোবাইল নম্বরের সূত্রে ও গোয়েন্দা কৌশল ব্যবহার করে রাজধানীর বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুবায়াত (৩২), মো. রোহিত হোসেন (২৭), মাসুম হান্নান (৪৯), আমান উল্লাহ (৩০), মোহাইমিনুল ইসলাম ইভান (২৯), মুসা উইল বাবরকে (৩৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

পরবর্তীতে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে বসুন্ধরা ও বারিধারা আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সৈয়দা আনিকা জামান ওরফে অরপিতা জামান (৩০) ও লায়লা আফরোজ প্রিয়াকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়। আবার তাদের তথ্যের ভিত্তিতে বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তানজীম আলী ও হাসিবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের হেফাজত হতে প্রায় ৫০০ (পাঁচশত) গ্রাম ভয়ংকর মেথামফিটামিন মাদক ‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ ও ৫০০০ (পাঁচ হাজার) পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে অনেকেই কৌতুহল বসত আইস সেবন করতে করতে এক সময় ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা এক গ্রাম আইস ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় কেনাবেচা করত বলে জানা যায়।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের বৈজ্ঞানিক সহকারী শফিকুর রহমান সরকারের ভাষ্যমতে, ইয়াবার চেয়ে ২০ গুণ বেশী শক্তিশালী ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। পাঁচশ গ্রাম আইস দিয়ে এক লাখ ইয়াবা তৈরি করা সম্ভব।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে সবাই বিত্তবান পরিবারের সন্তান। ইয়াবা ও আইসে আসক্তির পর তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েন কারবারে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় মোট আটটি মামলা করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে,দেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে আইস বা ‘ক্রিস্টাল মেথ’ ধরা পড়ে। তারপর ১০ থেকে ১২ বছর আর খবর ছিল না। ২০১৯ সালে পুনরায় মাদকটির আবির্ভাব ঘটে। সে বছর রাজধানীর ধানমন্ডিতে আইস তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আইস সেবনের পাশাপাশি ইয়াবার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাদকটি বরফের মতো যা বহনেও ঝামেলা কম তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং পরিবারের সদস্যদের সহজেই ফাঁকি দিতে পেরেছেন উচ্চবিত্ত পরিবারের এই সন্তানেরা।

বহনে সহজ আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবারের সদস্যদের ফাঁকি দেওয়া সহজ বলে ব্যবসায়ীরা ইয়াবার চেয়ে বেশি আইস নিয়ে আসছেন। মূলত এসব কারণেই দেশে আইসের ব্যবহার বাড়ছে বলে দাবি অধিদপ্তরের।

জব্দ করা আইস পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে এসেছে বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তারকৃত ১০সদস্যের চক্রটির মূলহোতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও কাদের মাধ্যমে দেশে আইস আসছে তা খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

সুত্র আলো‌কিত বাংলা‌দেশ ডটকম