করোনাকালের ঈদে ঢাকা ছাড়তে সরকারের পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হলেও তাতে খুব বেশি সাড়া মেলেনি। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নাড়ির টানে ছুটে গেছেন দেশের নানা প্রান্তে। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামীকাল বা পরশু পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। শেষ মুহূর্তে যে যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়ছে।
মালামাল পরিবহনের পিকআপভ্যান, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল ও পায়েচালিত ভ্যানে করে মানুষ রওয়ানা হচ্ছে গন্তব্যে। বাসে যেখানে ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ট্রাক ও পিকআপভ্যানে সেই পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি এমনকি মোটরসাইকেলে যাত্রীদের ডেকে ডেকে তোলা হচ্ছে। গাবতলী থেকে সাভার, আমিনবাজার, টাঙ্গাইল, এমনকি সিরাজগঞ্জ, রংপুর পর্যন্ত যাচ্ছে এসব পরিবহন।
ঈদকে সামনে রেখে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই বাড়তি ভাড়া গুণতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। একদিকে করোনা সংক্রমণের ভয়, অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বাড়ির পথে ছুটছেন তারা।
গাবতলী টার্মিনাল থেকে কোনো বাস না ছাড়লেও সেখানে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে আরিচা ঘাট পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসগুলো বন্ধ। এই রুটে চলছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। বাসে যেখানে ৭০ থেকে ১০০ টাকা ভাড়া ছিল, এখন জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে।
বাড়ি যেতে হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে পার হচ্ছে গাবতলী সেতু। পুরুষের পাশাপাশি নারী, শিশু এমনকি বৃদ্ধদের প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে হাঁটতে দেখা গেছে।
হাঁটতে হাঁটতে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেন শহিদুল ইসলামে নামের একজন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অফিস থেকে ঈদের ছুটি পেয়েছেন। পরিবার-পরিজন সবাই থাকে রংপুরে। ঢাকাতে তার কেউ নেই। ফলে কষ্ট করে এবং বাড়তি ভাড়া গুণে হলেও বাড়িতে যাবেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোগান্তি প্রতি বছরই হয়। এবার একটু বেশি। তবুও বাড়ি যেতে হবে। সবাই আমার অপেক্ষায় আছে।’ একই কথা জানিয়েছেন অধিকাংশ যাত্রী।
এদিকে পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে পিকআপ চালকদের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ‘বাস বন্ধ, মানুষের তো যাওয়া লাগবে। আমাদেরও ট্রেপ নাই। তাই মানুষ টানতেছি। আর সবাইরে ম্যানেজ করেই চলতে হয়। নইলে তো মানুষ নিয়া যাইতে পারতাম না।’
পণ্যবাহী যানে মানুষ পরিবহনের বিষয়ে গাবতলী এলাকায় দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মানবিক দিকটাও দেখতে হয়। তাই যারা বাড়িতে যাচ্ছে তাদের ছেড়ে দিচ্ছি। বাস বন্ধ। এখন পিকআপ, ট্রাকে যাচ্ছে। বাস বন্ধ রাখার নির্দেশ আছে। আমরা কোনো বাস যেতে দিচ্ছি না।’
এদিকে গত ৬ মে থেকে ঢাকার গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হলেও বন্ধ আছে দূরপাল্লার যান। কিন্তু তাতে থেমে নেই ঈদে মানুষের গ্রামে যাত্রা। বিকল্প উপায়ে, অসহনীয় দুর্ভোগ মাথায় করেই বাড়ি ফিরছেন তারা।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নদী পার হওয়ার জন্য ফেরিঘাট খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত মাত্রাতিরিক্ত চাপে সৃষ্টি করেছে দুর্ভোগের। বুধবার শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় ফেরি থেকে নামতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক।
১৩মে/আরকে/কারই/ইবনে