জমে উঠেছে লটারি জুয়ার নেশা,মাশূল দিবে শিক্ষার্থীরা !!

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় বগুড়া সেনানিবাস এর বি-ব্লক মাঠে ক্ষূদ্র ও কুটির শিল্প মেলায় প্রবেশ টিকিটের নামে লটারি জুয়া জমে উঠেছে।শাজাহানপুর উপজেলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এই টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী অফিসার কল্যাণ সমিতি (আরএওডাব্লিউএ) গত ৪ফেব্রুয়ারি এই মেলা শুরু করে।

বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা এই লাটারি টিকিট কিনে ফতুর হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা দিয়ে লটারি কিনছে। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার এবং ইজিবাইক এ প্রত্যান্ত গ্রামে গিয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন দিয়ে প্রবেশ টিকিটের নামে লটারি টিকিট বিক্রি করছেন।

লটারি ড্র এর চিত্র সরাসরি প্রচার করা হচ্ছে স্থানীয় ডিস এর চ্যানেল এবং ইউটিউব এ। তবে লটারি বন্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। মেলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ এবং লাটারি জুয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।

রহিমাবাদ দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দুধ বিক্রেতা জানান , আমি বাজারে ৩ কেজি দুধ নিয়ে এসে বিক্রি করে আমার স্ত্রী , সন্তান এর নামে ৫টা টিকিট ক্রয় করি ৷ কিন্তু পাই না । আজ ও টিকিট ক্রয় করেছি ৷ জানি না কি হবে ৷

রহিমাবাদ সি-ব্লক এলাকার ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা চালক জুয়েল রানা জানান, আমার এক ছেলে এক মেয়ে ৷ দুই জনে পড়াশোনা করে ৷ সংসারের ও তাদের পড়াশোনা ব্যায়ভার আমাকে বহন করতে হয় ৷ অটোরিকশা চালিয়ে যা উপার্জান হয় ঐ টাকা থেকে পুরষ্কারের আশা ২০ টাকা মুল্যের ৩টি লটারি টিকিট ক্রয় করি ৷পুরষ্কার পায় না৷

বৃ- কুষ্টিয়া গ্রামের শিক্ষার্থী সোহেল রানা জানান, আমি গরিব ঘরের সন্তান ৷পড়া লেখার পাশাপাশি আমি অন্যের জমিতে কাজ করে টাকা উপার্জন করে বাবা মাকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করি ৷ উপার্জিত সেই টাকা থেকে পুরষ্কারের আশায় প্রতিটি ২০টাকা মূল্যের ৫টি টিকিট একশত টাকায় কিনি। এখনো পুরস্কার পাইনি।

মেলায় আসা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুলের নবম শ্রেশির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রতিদিন দু একটি করে টিকিট কিনি। প্রথম দিকে বাবা মা কিছু বলত না। এখন বকা দেয়। কিন্তু টিকিট না কিনলে ভালো লাগেনা। টিফিনের টাকা দিয়ে টিকিট কিনি। বাসায় টিভি অথবা ইউটিউবে লটারি ড্র দেখি। এখনো পুরস্কার পাইনি।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, আমি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে লেখা পড়া করেছিলাম। ক্যান্টনমেন্ট এর জায়গায় লটারি জুয়া আগে কখনোই দেখিনাই। লটারি শুরু হওয়ার এই কয়েক দিনে শিক্ষার্থীদের যে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে জাতিকে তার মাশূল দিতে হবে।

স্থানীয় কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, লটারি ড্র আমাদের বগুড়া অফিসের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়।

মেলা পরিচালনা কমিটির এক সদস্য পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী অফিসার কল্যাণ সমিতি (আরএওডাব্লিউএ) মেলার আয়োজন করেছেন। আপনারা কিছু জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর আইএসপিআর অথবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড অফিসে যোগাযোগ করেন।

জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) শানজিদা মুস্তারী মোবাইল ফোনে জানান, মেলাটা হচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট এর নিজস্ব জায়গায়। আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া হয়নাই। মেলায় লটারি বাদ দিয়ে চালানোর জন্য ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এর সিইও কে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশসক জানেন। আমাদের আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার আর কিছু করার নাই। কোথায় কোথায় টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে সেটা বন্ধ করার সময় আমার নাই।

এ বিষয়ে জানতে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সরকারি মোবাইল ফোন নাম্বারে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।