গৃহবধূর লাশ ফেলে স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন!

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর মরদেহ হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বুধবার দুপুরের দিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরনের স্বর্ণালংকারগুলো খুলে নিয়ে যাওয়ার কথা প্রচার পাওয়ায় একে চরম নিষ্ঠুরতা বলে অভিহিত করছেন সচেতন মহল।

ফেলে যাওয়া গৃহবধূর নাম ইয়াছমিন আক্তার সেতু (২৩)। তিনি উখিয়া উপজেলার পূর্ব দরগাবিল বাগানপাড়া এলাকার রফিক উদ্দিনের মেয়ে এবং সোনারপাড়া এলাকার আবদুস সালামের স্ত্রী।

হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গৃহবধূ সেতুকে হাসপাতালে আনে তার স্বামী আবদুস সালাম ও শাশুড়ি। খবর পেয়ে সেতুর নিকটাত্মীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মাদ আলী দুপুরের পরপরই হাসপাতালে যান। সেখানে সেতুর মরদেহটি একা পড়ে থাকতে দেখেন। মরদেহের কানে-গলায় থাকা স্বর্ণালংকারগুলোও উধাও ছিল।

ইয়াছমিনের মা সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মাত্র ১০ মাস আগে সেতুর সঙ্গে আবদুস সালামের বিয়ে হয়। আর সেতু এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সেতুকে স্বামী-শাশুড়ি-দেবর ও ননদ মিলে প্রহারের পর গলাটিপে হত্যা করেছে।

তার মতে, সেতুর স্বামী অত্যন্ত ভালো ছিল। কিন্তু মা ও ভাইয়ের সঙ্গে সেতুর ঝগড়ার কথা বলে তাকে প্রায় মারধর করা হতো। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে প্রহারের পর তাকে হত্যা করে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

ইয়াছমিনের ভাই তোফায়েল বলেন, আমার বোন উখিয়া বঙ্গমাতা কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। না হলে হাসপাতাল থেকে তারা কেন পালিয়ে গেছে?

তিনি দাবি করেন, ইয়াছমিনের গলায় সবসময় একভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন থাকত। নাক, কান এবং হাতেও থাকত স্বর্ণালংকার। হাসপাতালে পাওয়া মরদেহের সঙ্গে এসব কিছুই ছিল না।

হাসপাতালের এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে মোহাম্মাদ আলী বলেন, আমার বোনের স্বামী ও স্বজনরা এসব স্বর্ণালংকার নিয়ে চেলে গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার ভোরে অসুস্থ অবস্থায় সেতুকে উখিয়ার কোর্টবাজার অরিজিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। আর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সেতু মারা যান বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দাবি করেন।

জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল পৌঁছার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল মনসুর বলেন, এ রকম একটি ঘটনা শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্তে এটি হত্যা প্রমাণ মিললে গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা গ্রহণ করা হবে।