কক্সবাজার রেললাইন বাস্তবায়নে মন্তরগতি 

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
এন আলম আজাদ,কক্সবাজার  প্রতি‌ব‌দেক : কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে মন্তরগতি দৃশ্যমান হচ্ছে। অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নানা ঝামেলাও এ উন্নয়ন প্রকল্প পিছিয়ে দিচ্ছে বলে অভিঙ্গ মহল মনে করছেন। পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেল আসবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে এমনই আশা কক্সবাজারবাসীর।কক্সবাজারের উখিয়ার ঘুমধুম পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেল লাইন নির্মিত হবে। করোনা ও বর্ষার কারণে এ কাজের গতি আরো মন্থর অবস্থায় পড়েছে।
 কক্সবাজার জেলার অর্ধকোটি মানুষের স্বপ্ন  এ রেললাইন নির্মাণ। সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি  যথাসময়ে রেললাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।প্রায় দুই বছর আগে শুরু হওয়া রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এখনো ৪১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।এর বেশীরভাগই কক্সবাজার অংশে।
 সাম্প্রতিক করোনা সংকট ও বৃষ্টির প্লাবনে বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের এ প্রকল্পটি  দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্বাভবনা রয়েছে। এর ফলে কাজে এসেছে ধীরগতি এমনটিই মন্তব্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। প্রকল্পের প্রথম দিকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণে অধিগ্রহণকৃত জমি প্রকল্প পরিচালক বুঝে পেলেও চট্রগ্রামের ১ কিলোমিটার এলাকায় ঘর-বাড়ি থাকায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান পরিচালক।
 সূত্রজানায়,কক্সবাজার অংশে স্বাভাবিক গতিতে কাজ চললেও পদে পদে বাধা চট্টগ্রাম অংশে।ফলে কাজও কক্সবাজার অংশে বেশি হয়েছে। জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ করার পর তা প্রকল্প পরিচালককে বুঝিয়ে দেয়া হলেও কাজ করতে গেলে স্থানীয় লোকজন সংগঠিত হয়ে  বলেন-আমরা অধিগ্রহনের কোন টাকাই পাইনি।প্রকল্পের চট্টগ্রাম অংশেও বাধারমুখে পড়ছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। লোহাগাড়া-সাতকানিয়া এবং চন্দনাইশ এলাকায় এমন দৃশ্য প্রতিয়মান।এ অংশে প্রায়এক কিলোমিটার ঘর-বাড়ি পড়ায় এ সংকট আরো তীব্র।
প্রকল্পটির পরিচালক মো. মফিজুর রহমান জানান, বিদেশি অর্থায়নে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।কাজের টিম লিডার হচ্ছেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক। করোনায় লকডাউন শুরুর সাথে সাথেই সব ব্রিটিশ নাগরিক দেশে ফিরে গেলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদের।যে কারনে পুরো এপ্রিল মাসই কাজ বন্ধ ছিল। মে মাসের মধ্যখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে।তিনি জানান,সব প্রকল্পে জুলাই-আগস্ট মাসে বৃষ্টির কারণে তেমন কাজ হয় না। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের শেষের দিকে। করোনা পরিস্থিতি যদি আর না বাড়ে, তাহলে মেয়াদের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশা দেখছেন তিনি।
প্রকল্পের কক্সবাজারের অংশে মাতামুহুরি নদীসহ বিভিন্ন নদী থেকে মাটি উত্তোলন করা গেলেও মাটির বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম অংশে। সরকার এখন আইন করেছে কোন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা যাবে না। এই কারনে চট্টগ্রাম অংশে মাটিরও সমস্যা প্রকট। কষ্ট বেশি হলেও বিকল্প ব্যবস্থায় মাটি আনার পক্কপাতি তিনি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। যার  পুরোটাই বিনিয়োগ করছে এশিয়া উন্নয় ব্যাংক। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ করা হবে। পরবর্তী ধাপে কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত আরো ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের সম্ভাবতা যাচাই করা হচ্ছে।  প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটারে ট্রেন চলবে ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে মাত্র ১ ঘন্টা ২০মিনিট।
তবে এই প্রকল্পের বড় সমস্যা হলো চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী রেল লাইন। এই লাইনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিমি রেলপথে স্টেশন থাকবে সর্বমোট ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম।
কক্সবাজারবাসীর বহুল প্রত্যাশিত রেললাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার ও চট্রগ্রাম বিভাগের বান্দরবন সহ পাশ্ববর্তী উপজেলা গুলোর অর্থনীতির সম্ভাভনার ধার খুলে যাবে। একইসাথে এ রেললাইন প্রকল্প কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে মেঘা প্রকল্প গুলোর সাথে যুক্তহয়ে উন্নয়নের মাইলফলকে যুগান্তকারী অবদান রাখবে এ প্রত্যাশা জেলাবাসীর। তাই সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের প্রশংসিত এ উদ্যোগের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান তারা।
সীমান্ত বাংলা/সেপ্টেম্বর২০/ইবনে যায়েদ