টমট‌মের দৌরা‌ত্মে সাধারণ মানু‌ষের ত্রা‌হি অবস্থা

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১

এম আয়াজ রবী ; উখিয়া জুড়ে টম টম ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার দৌরাত্ম্য আবারও বেড়েছে। এসব নিয়ে টোকেন বাণিজ্যও এখন রমরমা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক দলীয় নেতাসহ বিভিন্ন মাধ্যমকে  ম্যানেজ করে উখিয়াতে যত্রতত্র এসব গাড়ির চলাচল বেড়েছে। আগে অলি-গলিতে চললেও এখন মহাসড়কে উঠে চলছে দেদারছে। অবৈধ এসব গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঝুঁকির পাশাপাশি মুল সড়কসহ অলি-গলিতে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন কারন। তারমধ্যে চৌম্বক অংশ হচ্ছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অভাব, প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন, নিয়ন্ত্রনহীনতা ও প্রশাসনের নজরদারীর অপ্রতুলতা অন্যতম। উল্লেখিত প্রধান কারনগুলোর জন্য দৈনন্দিন উখিয়া উপজেলার কোন না কোন স্থানে টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সার দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে অপ্রতিরোধ্যগতিতে, যা একদিকে যেমন মর্মান্তিক, অন্যদিকে খুবই দুঃখজনক । এতে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্বের পাশাপাশি নিহতও হচ্ছে প্রতিনিয়ত কোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কারো আদরের সন্তান বা বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন । মূলতঃ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে ভাড়ায় চালিত এসব টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা চালানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। এরপরও এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ ড্রাইভারকে জীবনমাল বাজি রেখে এসব গাড়ি চালানোর সুযোগ করে দেয়ায় দূর্ঘটনার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলার ভোক্তভোগী জনসাধারন ।
এদিকে যেখানে সেখানে টমটম ও অটোরিক্সার দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও এব্যাপারে প্রশাসনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটোচালকদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গাড়ির মালিকরাও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দিয়ে ভাড়ায় চালানো হচ্ছে টমটম। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে জীবনহরণকারী এসব টমটম চালকদের হাতে দেয়ার আগে কোন ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। যার কারণে টমটম দুর্ঘটনা ও চালকদের বেপরোয়া দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল। তাছাড়া ভাড়ার ক্ষেত্রেও চলছে নৈরাজ্যকর অবস্থা। টমটমে উঠানামা দশটাকা সেই অনেক দিন পুর্ব থেকেই। এ ব্যাপারে কিছু বলতে গেলেই সাধারন যাত্রীদের সাথে লেগে যায় রীতিমত কথা কাটাকাটি, অনেকক্ষেত্রে হাতাহাতি হবার নজীরও রয়েছে। বিশেষ করে দূর দুরান্ত থেকে চাকুরী করতে আসা সাধারন যাত্রীদের রীতিমত নাকানি চুবানী খাওয়াচ্ছে এসব অবৈধ টমটম চালকরা। অনেক সময় তারা তাদের পেশি শক্তি ও বিভিন্ন নেতা নের্তৃত্বের ভয় দেখায়।

উখিয়া কাজী পাড়ার এনজিও কর্মী জাহাংগীর আলম জানান, গতো ০৩/০৯/২০২১ তারিখে উখিয়া সদরের হাজীর পাড়া এলাকার ময় মুরব্বী বাদশা মুন্সীকে বেপরোয়া টমটমের ধাক্কায় গুরুত্বর আহত করা হয়েছে এবং উনাকে উপজেলা সদর হাসপাতাল থেকে কক্সবাজার হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। গত বছর অদক্ষ ও প্রশিক্ষনবিহীন অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের বেপরোয়া গতিতে টমটম চালানোর কারনে সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদা্রের মোটর বাইককে ধাক্কা দিয়ে প্রায় একবছর অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে ছিলেন। উখিয়া সদর ছাড়াও, উখিয়ার কোটবাজার, মরিচ্যা, কুতুপালং, থাইংখালী, পালংখালী হাজার হাজার টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা কোনপ্রকার রোড পার্মিট ছাড়া রাজপথে চলাচল করছে। তাছাড়া বিভিন্ন ষ্টেশন ও বাজারের কানেক্টিং রোডের সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারন যাত্রী আনা নেওয়ার জন্য টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটো রিক্সা এখন কমন পরিবহন হিসেবে ব্যবহ্রত হয়ে আসছে । টমটম চালক খাইরুলের সাথে কথা প্রসংগে এই প্রতিবেদক জানতে পারেন, এসব টমটম চালাতে কোনপ্রকার রোড পার্মিট প্রয়োজন পড়েনা। নির্দিষ্ট এলাকায় সরকারদলীয় বা প্রভাবশালী মহলের ঈশায়ায় ও দৈনিক ও মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে বিভিন্ন রোডে এসব টমটম চলাচল করে। রাজনৈতিক  দলীয় বিভিন্ন স্তরের নেতা বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৈনিক ও মাসিক মাসোহারা দিলে যে কেউ এসব অবৈধ যানবাহন রাস্তার চালাতে পারে, শুধু বিভিন্ন স্তরে মাসিক প্যাকেট যথাসময়ে হাত বদল করলেই সাত খুন মাফ, সাধারন জনগন চুলোয় যাক সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ থাকেনা। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সাকে অবলম্বন করে পুলিশ ও বিভিন্ন আইন শৃংখলাবাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মরণঘাতি ইয়াবা পরিবহনের কাজেও এসব টমটম ও অটো রিক্সা ব্যবহ্রত হয়ে আসছে, যা আরও মারাত্মক আকার ধারন করেছে। তাছাড়া এসব টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সাগুলো কোনপ্রকার রাষ্ট্রীয় অনুমোদন নিয়ে রোডে চলাচল না করার কারনে রাষ্ট্র এসব যানবাহন থেকে সুনির্দিষ্ট কোন আয়কর, ভ্যাট বা অন্যান্য কর পাচ্ছে না। তাই রাষ্ট্র লক্ষ লক্ষ টাকার আয়ের উৎস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উখিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় দশলক্ষ রোহিঙ্গাদের আবাস স্থল হবার কারনে, তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, নিত্যপন্যসামগ্রী পরিবহন, সাথে একশ এর উপর বিভিন্ন এনজিও ও আইএনজিও সংস্থায় চাকুরীরত হাজার হাজার কর্মীবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত পরিবহনের চাপের কারনে উখিয়া সদর, কোটবাজার ও মরিচ্যা বাজারকে চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু এসব বৈধ/অবৈধ যানবাহনগুলো এলোমেলো, বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারনে ষ্টেশন ও বাজারগুলো নিত্য যানজটে নাকাল থাকে, রোড সম্প্রসারন করে চারলেনে উন্নীত করার সুফল অংকুরে বিনষ্ট করার পেছনে এসব যানবাহন গুলো মুখ্য ভুমিকা পালন করছে। তাছাড়া, উখিয়া সদরসহ, কোটবাজার, মরিচ্যা, কুতুপালং এ কোথাও এসব যানবাহন রাখার জন্য কোন ষ্ট্যান্ড নেই। সবগুলো যানবাহন রাস্তার উপর বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে রেখে যানজটের সৃষ্টি করে। উখিয়ার বিভিন্ন ষ্টেশনসমুহ হাজার হাজার মানুষে দিবারাত্রি সরগরম থাকে কিন্ত যানজট নিরসন ও ট্রাপিক কন্ট্রোলের জন্য কোন ট্রাপিক পুলিশ, টহল পুলিশ, বা রোড পুলিশকে কদাচিৎ দেখা যায়।

উখিয়া হাসপাতাল ও কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন কেউ না কেউ আসছে ব্যাটারি চালিত টমটম দূর্ঘটনা সাথে জড়িত সাধারণ মানুষ। এদের কেউ কেউ মারা যাচ্ছে হাসপাতালে আনার সাথে সাথে। আবার কেউ কেউ এমনভাবে দূর্ঘটনা পতিত হয়েছেন যাদের উখিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করতে হয় আবার অনেকক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে এদের অনেককে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রেফার করতে হচ্ছে। অন্যদিকে যাদের রাখা সম্ভব হয় তাদের অনেকে পুরোপুরি সুস্থ করাও সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের পা কেটে ফেলতে হচ্ছে, মস্তিস্কে গুরুতর আঘাতে কারণে অনেকের মস্তিস্ক বিকৃত হচ্ছে। অনেকে গুরুতর আঘাতের কারনে বিকলাঙ্গ হচ্ছে চিরজীবনের জন্য।
এদিকে অজানা কারণে দূর্ঘটনায় কবলিত এসব টমটম গাড়িসহ মালিক ও চালককে অভিযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোন সুরাহা পায়না অভিযোগকারীরা। সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় এসব টমটম গাড়ি ছাড় পেয়ে যায় বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ ভুক্তভোগী । যার কারণে প্রতিনিয়ত এসব টমটম গাড়ীর দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উখিয়ার সাধারন মানুষের আকুতি যানজট সৃষ্টিকারী অবৈধ টমটম ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা গুলোকে একটি যথাযথ নিয়মের অধীনে এনে, শৃংখলিত করে দক্ষ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারের হাতে তুলে দিলে এবং প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে যত্রতত্র অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ ড্রাইভারের হাতে সাধারন যাত্রীকে হতাহতসহ অঙ্গহানীর সম্মূখীন হতে হবে না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে উক্ত যানবাহনগুলো চলবে এবং রাষ্ট্র ও লক্ষ লক্ষ টাকা আয়কর পাবে।

সীমান্তবাংলা / ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১