অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ, সেই ১৬ ছাত্রলীগ নেতার শাস্তি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২০

রাজশাহী প্রতিনিধি: অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় জড়িত সাবেক ও বর্তমান ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এই ঘটনায় চারজনের ছাত্রত্ব বাতিল, পাঁচজনের সনদ আটক ও সাতজনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ছাত্রত্ব বাতিল ও সনদ আটকানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাউন্সিলের সুপারিশে জড়িত ৪ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৫ শিক্ষার্থীর মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা ও ৭ শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ গত মাসে বাংলাদেশ কারিগরী বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল।

কারিগরী বোর্ড গত ১৫ ডিসেম্বরের সভায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুমোদন দেয়। দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোরাদ হোসেন মোল্লা উপস্থিত সবাইকে জানান। সভায় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় একাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০১০ ও ২০১৬ প্রবিধানের নিবন্ধনের ৩.২ ধারা অনুযায়ী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে চার ছাত্রের নিবন্ধন বাতিল (ছাত্রত্ব) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইভাবে সভায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শেষ পর্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় পাঁচ ছাত্রের সনদ তিন বছরের জন্য জব্দ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করার জন্য বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সভাপতিসহ ১৫ জন সদস্য সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেছেন।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, গত বুধবার বাংলাদেশ কারিগরী বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত তারা হাতে পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আমাদের নিজেদের একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সবার সম্মতিক্রমে (২ জানুয়ারি) থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও সনদ আটকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। আর যাদের অন্যত্র বদলি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে পরীক্ষার পরে ১ ফেব্রয়ারি থেকে বদলির আদেশ কার্যকর করা হবে। তবে গতকাল সভা শেষে তাদের টিসিতে ইস্যু করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মিডটার্মে অকৃতকার্য ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের ওপর চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর কার্যালয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেন ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। এ নিয়ে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়।

অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার ঘটনায় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় মূল হোতাসহ এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।