মারজান চৌধুরী:
কক্সবাজার সহ সারাদেশে মাদক কারবারিদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ঘটছে দুই পক্ষের মারামারি, সংঘাত ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা। খুনসহ এসব ঘটনা ঘটছে প্রকাশ্যে। খুনের ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন দু-এক জন আসামিকে আটক করলেও মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব নৃশংস ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে । মাদকসংশ্লিষ্ট ঘটনায় অসংখ্য খুন হয়েছেন। মারামারিতে আহত হয়েছেন আরো কয়েক’শ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ভারত ও মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। দেশের উত্তর পূর্ব পদ্মা নদীর প্রবাহ দ্বারা উভয় দেশ বিভক্ত হওয়ায় সহজেই পাওয়া যায় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য। চুরি-ছিনতাই, মারামারি-সংঘাতসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনের উৎস একমাত্র মাদক।
দেশের থানা গুলো থেকে অপেক্ষাকৃত দূরের ইউনিয়ন গুলোতে মাদক কারবারিরা একপ্রকার নিরাপদে তাদের কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও মাদকের টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। অভিযোগ করলেও প্রশাসন উল্টো প্রতিপক্ষ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে উল্টো অভিযোগকারীর নাম প্রকাশ করে দেয় ফলে কেউ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে অভিযোগ করতে চাই না। দ্বন্দ্ব যখন সহিংসতায় রূপ নিয়ে খুনের মতো ঘটনা ঘটে, তখনই প্রশাসন সক্রিয় হয়।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও টিভি’র সংবাদ হয়েছে , চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের তাঁতারপুর গ্রামে মাদক কারবারের প্রতিবাদ করায় খুন হন শাহবাজ আলী নামের জনৈক কৃষক। জেল থেকে জামিন পেয়েই একটি বাহিনীর সদস্য থেকে সাহাবুরসহ তার লোকজনকে হুমকি দেয়। সন্ধ্যা তাঁতারপুর আক্কাসের মোড়ে জনসমক্ষে সাহাবুরের ভাই কাজলের ওপর হামলা করে হেলমেট পরিহিত প্রায় ২০ জন সন্ত্রাসী। তখন সেই মোড়ে চায়ের দোকানে বসে থাকা শাহাবাজ আলী ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকে প্রকাশ্যে ধারালো হাঁসুয়া ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৯ আগষ্ট কক্সবাজারের টেকনাফে মাদকাসক্ত ছেলে পারভেজের হাতে বাবা বশির আহাম্মদ খুন হয়েছেন । মাদক সেবনের প্রতিবাদে এবং সংসারের খরচ চাওয়ায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রতিদিনের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, ‘মাদক কারবারি এসব বাহিনীর কাছে এলাকার মানুষ অসহায়। তাদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষের শান্তিতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে তারা। এতে সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের মতো বড় ঘটনা না ঘটলে স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না।’
সারাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করলেও মাদক কারবারিরা পুরোদমে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুতেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যে সরিষা দিয়ে ভুত তাড়াবে সে সরিষার ভেতর কোন ভুত আছে কিনা সরকারকে নজর দিতে হবে।