প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২০ , ১০:০৪:০১ প্রিন্ট সংস্করণ
সীমান্তবাংলা ডেক্স : কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামে আভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সংগঠনটির আমির আল্লামা শফীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পদ পূরণে ডাকা প্রতিনিধি সম্মেলনকে ঘিরে সেই কোন্দল এবার প্রকাশ্যে এসেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে প্রভাবশালী এই সংগঠনটি।
রবিবার হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এই সম্মেলনের আহ্বায়ক করা হয়েছে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে। তবে এর নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করছেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী তার মামা। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, বাবুনগরী তার বলয়ের লোকদের দাওয়াত করে এনে হেফাজতের আমির হতে চাচ্ছেন। এজন্য তারা এই সম্মেলনকে অবৈধ ঘোষণা করে একতরফা কমিটি না করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আহমদ শফীর ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী। উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় সদস্য এবং আহমদ শফীর নাতি মাওলানা কায়সার।
কাউন্সিল না করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তারা আহমদ শফীর মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ আখ্যায়িত করে এর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানান।
এদিকে বিকালে একই দাবি নিয়ে ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি হেফাজতে ইসলামের যে প্রতিনিধি সম্মেলন ডাকা হয়েছে সেটাকে অবৈধ আখ্যায়িত করে দাবি করেছেন, মূলধারাকে বাদ দিয়ে চোরাইপথে কমিটি গঠন করলে তা দেশের আলেম সমাজ মেনে নেবে না। এর জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে হলে সেটা করতেও তারা রাজি বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রবিবার হাটহাজারীতে যে প্রতিনিধি সম্মেলন ডাকা হয়েছে সেখানে সারাদেশ থেকে ৫০০ প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী সংগঠনটির এখনকার কমিটির প্রচার সম্পাদক, তিনি এবং কমিটির নায়েবে আমিরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের অনুসারী যারা রয়েছেন, তাদের কাউকেই সম্মেলনে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আলোচিত এই সংগঠনটিতে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে।
আহমদ শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজত নেতা মাঈনউদ্দিন রুহী দাবি করেছেন, মহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতে ইসলাম থেকে অনেক আগে পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি কোনো সম্মেলন আহ্বান করতে পারেন না।
তবে বাবুনগরী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, তারা বৈধভাবেই সম্মেলন ডেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। এখানে কিছু লোকের বিরোধিতার কারণে তাদের সংগঠনে ভাঙনের কোনো বিষয় নেই বলে দাবি তার।
হেফাজতের নতুন আমির পদে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর নাম জোরেশোরে প্রচারিত হচ্ছে। আর মহাসচিব পদে আলোচিত হচ্ছে বর্তমান নায়েবে আমির এবং ২০ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নাম। এছাড়াও আমির পদে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে মাওলানা মামুনুল হকের নাম আলোচিত হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মহানবী ও ইসলামের বিভিন্ন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে হেফাজতে ইসলাম। তবে এর এক মাস পর ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে বিপর্যয়ের পর হেফাজতে ইসলাম অনেকটা কোণঠাসা হয়ে যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তী সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে হেফাজতকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
আল্লামা শফী যতদিন জীবিত ছিলেন সরকারের সঙ্গে তার ও হেফাজতে ইসলামের সুসম্পর্ক ছিল। অভিযোগ রয়েছে, আল্লামা শফীর নাম ব্যবহার করে তার ছেলে আনাস মাদানীসহ একটি চক্র সরকারের কাছ থেকে ব্যাপক সুবিধা গ্রহণ করেছে। এজন্য ক্ষুব্ধ অংশটি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আল্লামা শফীকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় আনাস মাদানীকে।
এরপর থেকে হাটহাজারী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলয়ের। এবার তারা হেফাজতে ইসলামেও নিজেদের একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এই বলয়ের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তাদের দাবি, হেফাজতে ইসলাম কারও বলয়ের নয়, ইসলামবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/জেবি/এডমিন/ইবনে