রোহিঙ্গা গনহত্যা, আরো দুজন সেনা সদস্য মুখ খুলতে যাচ্ছেন আরাকান সামরিক জান্তার বিরুদ্বে

সীমান্তবাংলাঃ এবার রাখাইনে দায়িত্ব পালন করা অপর দুই সৈনিক চ্যাও মিও অং ও পার তাও নি মুখ খুলেছেন নিজ দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। জ নাইং ও মায়ো উইনের সঙ্গে একসঙ্গে ভিডিওতে স্বীকারোক্তি দেন তারা।
চ্যাও মিও অং বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালিয়েছে সেনাবাহিনী। বাহিনীর মধ্যে জাতিগতভাবে বৈষম্য করা হয়। অনেক কর্মকর্তা মাদকাসক্ত। মাদকে পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে তাদের।
পার তাও নি বলেন, তারা (সেনা কর্মকর্তারা) আমাদের বলতেন ভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সবাই দাস। তাদের সঙ্গে সে হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। সন্ত্রাসী বাহিনীর মতো অস্ত্র ব্যবহার করে বেসামরিক জনগণের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে সেনাবাহিনী।
এর আগে স্বীকারোক্তিতে মায়ো উইন তুন বলেছেন, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে তিনি ও তার ব্যাটালিয়নকে পাঠানো হয়েছিল সেখানকার কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালানোর জন্য।
তিনি ৩০ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের মরদেহ গণকবর খুঁড়ে পুঁতে দেন। একজন নারীকে ধর্ষণের কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
আরেক সেনা সদস্য জ নাইং তুন বলেছেন, তার ব্যাটালিয়ন প্রায় ২০টি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। এ পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে। এই দু’জনের বক্তব্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস জানিয়েছে, তারা উভয়ে প্রায় ১৮০ রোহিঙ্গা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই চার সেনার মধ্যে দুজন আছেন হেগের অপরাধ আদালতের জিম্মায়। বাকি দু’জনও আদালতে জবানবন্দি দেবেন বলে জানা গেছে। গণহত্যার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারেন এই সেনারা- এমন মত মানবাধিকার কর্মীদের।
ফোর্টিফাই রাইটসের সিও মাথিউ স্মিথ বলেন, এই প্রথম তাদের সেনাবাহিনীর মধ্যকার কারও কাছ থেকে গণহত্যার খবর আমরা পাচ্ছি।
তাদের কথায় স্পষ্ট, রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়েই অভিযানে নেমেছিল মিয়ানমার সেনাবাহনী। বিচারের প্রক্রিয়ায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই চারজনের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে রাখাইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
সাবেক সেনাসদস্যের এই স্বীকারোক্তির ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে চাপে ফেলেছে মিয়ানমারকে। বিশেষ করে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির অবস্থানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কারণ জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলায় তিনি সশরীর হাজির হয়ে নিজের দেশের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ কারণে রোহিঙ্গা গণহত্যার এই স্বীকারোক্তিকে আমলে নিয়ে মিয়ানমারের বিচার করার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
তবে প্রথম দুই সেনাসদস্য স্বীকারোক্তি দেয়ার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখন দায় ঢাকার চেষ্টায় নেমেছে। তারা বলেছে, ওই দুই সেনাসদস্যের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।
সুত্রঃ ঢাকা টাইমস