রোহিঙ্গা জনগোষ্টি আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন, নিরক্ষর, হুজুগে, একরোখা, হিংস্র, ধর্মীয় আচারে কু-সংস্কারচ্ছন্ন, নিম্নমানের জীবন যাপনে অভ্যস্ত,রগচটা, সন্ত্রাসী, অপরাধপ্রবণ ও কানকথায় বিশ্বাসী সন্দেহ প্রবণ জাতি। তারা তিলকে তাল করে বিশ্ববাসীর সহানুভূতি অর্জনে উদগ্রীব। তারা চিলে কান নিছে অজুহাতে চিলের পেছনে ছুটতে অভ্যস্থ কিন্ত কানের জায়গায় কান আছে কিনা একটু কষ্ট করে যাছাই করার ফুরসত পায়না। অনেকক্ষেত্রেই ন্যাংটার নেই বাটপারের ভয় অবস্থা! ঐতিহাসিকভাবে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের সাথে সব সময় বিপরীতমুখী অবস্থানে ছিল বলে একটা ট্রাডিশন আছে।
তবে একসময়, তারা এত উচ্ছৃংখল ও অপরাধপ্রবণ ছিলনা। দিন যত যাচ্ছে ততই অবনতি হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পরিবেশ, প্রতিবেশ। অভ্যন্তরীণ কোন্দলও তুংগে বিরাট এই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত (আগস্ট, ২০২০) কমপক্ষে ৭০ জন রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই খুন হয়েছেন, তাদের গোষ্টি ও আধিপত্যবাদী স্বার্থান্বেষী মনোভাবের কারনে। এছাড়া ‘বন্দুকযুদ্ধে’ও নিহতের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতক। যার প্রত্যেকটি ঘটনার আড়ালেই রয়েছে এক একটি অপকর্মের বিষের বাঁশীর সাতকাহন ও অপরাধ প্রবণের বীনি সুতোর বাঁধন !
মাস্টার মুন্না বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প। সন্ত্রাসী এই গ্রুপ চায় আশপাশের অনিবন্ধিত কয়েকটি ক্যাম্পেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। এ নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আরও কয়েকটি গ্রুপ আনাস-মাহাদ, সেলিম-আলম বাহিনীর সঙ্গে মুন্না বাহিনীর বিরোধ চলছে দীর্ঘ দুই মাস ধরে। ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, বাজার নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার এবং অবৈধ আয়ের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাত হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে।
গত সপ্তাহ দুয়েক যাবত রেজিষ্টার্ড ও নন রেজিষ্টার্ড রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঘটে গেছে জঘন্যতম নর হত্যা। মুলতঃ নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গাদের মধ্যে আধিপত্যবাদ, বিভিন্ন মাদক সংক্রান্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, জাতিগত দ্বন্ধ, হিংসা, বিদ্বেষ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, বাজার নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ ও অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে ঘটে চলছে তুমুল যুদ্ধ। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার এবং অবৈধ আয়ের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাত হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে। এখানে উল্লেখ্য যে, সি-ব্লক, ই-ব্লক, ও এফ-ব্লকের মধ্যে সংঘটিত আধিপত্যবাদ ও গোষ্টি সংঘাত ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। অত্র প্রতিবেদক সরেজমিনে ব্লক ই-এর রোহিঙ্গা বাসিন্দা শুকুরের তরফ থেকে জানতে পারেন, নন রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদেরকে খ্রীষ্টান উপাধি দিয়েছে। তারা বলেছেন, রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা গত ১৯৯১ বা ২০১২ সালে বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন এনজিওদের খপ্পরে পড়ে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে নতুন আগত ইসলাম ধর্মের অনুসারী রোহিঙ্গাদের এনজিও ও আইএনজিও কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হরণ করে নিচ্ছে। পুরনো রোহিঙ্গারা এনজিও দের সহায়তায় সুযোগ সুবিধা বেশি ভোগ করছে। তাদেরকে এনজিও কর্তৃক অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করে নতুন রোহিঙ্গাদেরকে সুবিধা বঞ্চিত করে কোনঠাসা করে রাখার কথাও সে অত্র প্রতিবেদককে জানান। নতুন (নন-রেজিষ্টার্ড) রোহিঙ্গারা মনে করেন, রোহিঙ্গা মুসলিম কর্তৃক রোহিঙ্গা খ্রীষ্টান ( রেজিষ্টার্ড রোহিঙ্গা) দের বিরুদ্ধে ধর্মীয় যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য তারা এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান, সন্ত্রাসী মুন্না ও তাদের সসজ্জ্বিত ট্রেইনিং প্রাপ্ত যোদ্ধা ও নন রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের আলিক্বিন নামক উগ্র সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের কারনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বাহিনীর রোহিঙ্গা অন্য বাহিনীর রোহিঙ্গাকে পিটিয়ে, ছুরিকাঘাতে, গনপিটুনীতে, গলা কেটে হত্যা করছে। এক বাহিনী অন্য বাহিনীর আবাস স্থল, শেড, পুড়িয়ে দিয়ে, রাতভর উভয় বাহিনীর মধ্যে থেমে থেমে গুলাগুলির শব্দে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত হয়ে পড়ছে।
রাতের অন্ধকারে সংগঠিত ঘটনায়, আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন পাহাড়ে অপারেশন পরিচালনা করতে খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কারন, একই স্থানে বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় ৭/৮ লাখ রোহিঙ্গাদের আবাস। আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে যেকোন ভাবে এত রোহিঙ্গা দ্বন্ধে লিপ্ত হয়ে পড়লে, পরিস্থিতি নাজুক ও আয়ত্বের বাইরে চলে যাবার ভয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীকে খুব সাবধানে উদ্ভূত পরিস্থিতি ট্যাকল দিতে হচ্ছে। অনেক পক্ষ বসে আছেন, আইন শৃংখলা বাহিনীকে প্রতিপক্ষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় একটা বিশৃংখলা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। গত দু’সপ্তাহে প্রায় দশজন লোক মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত দশজনের দু’জন স্থানীয় অধিবাসী, পেশায় মাইক্রো ড্রাইভার ও হেল্পার রয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। গত ৪-অক্টোবর-২০২০ ইংরেজি তারিখে ৪ জন, আবার ৭ ই অক্টোবর-২০২০ ইংরেজি তারিখে আরও ৪ জন লোক মারা যাবার খবর পাওয়া যায়। রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের মুন্না বাহিনীর মুন্নার বড় ভাইকে গণ পিটুনীতে স্পটে মেরে ফেলার খবর এবং মুন্না বাহিনীর মুন্নাকে আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক আটক করার খবরও পাওয়া গেছে। উক্ত ঘটনার আলোকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তারা দিন দিন বেপরোয়া, হিংস্র ও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তাদেরকে দেশী ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্টি, দেশি বিদেশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, উস্কানী দিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পায়তারা করছে কিনা আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ছে।
কুতুপালং ক্যাম্পে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন ইন্সপেক্টর জানান, নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপের সঙ্গে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের তথ্য মতে, গত এক বছরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ক্যাম্পে নিহত হয়েছে ৪৬ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ২৩ জন। নিহতদের প্রায় সবাই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। এরা ইয়াবা ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত।
টেকনাফের পুরান পল্লানপাড়া এলাকার পাহাড়ে রয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আবদুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাতের গোপন আস্তানা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে চাকমারকুল ক্যাম্প-২১ থেকে ক্যাম্প-২৭ জাদিমুরা পর্যন্ত সাতটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। তার কথাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অঘোষিত আইন। খুন থেকে গুম, মাদক পাচার থেকে আদম পাচার এমন কোনো অপরাধ নেই হাকিম ডাকাত ও তার লোকজন করে না। টেকনাফের আলোচিত নুরুল কবির হত্যা, সিএনজি ড্রাইভার মো. আলী হত্যা, নতুন পল্লানপাড়ার সিরাজ মেম্বার ও মুন্ডি সেলিম হত্যা, আবদুল হাফিজ ও তোফায়েল হত্যাসহ অনেক হত্যা মামলার আসামি এই হাকিম ডাকাত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেকবার অভিযান পরিচালনা করেও পারেনি হাকিম ডাকাতকে ধরতে। তবে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তার দুই ভাইসহ বাহিনীর নয় সদস্য।
শুধু হাকিম ডাকাত, মাস্টার মুন্না বা আনাস-মাহাদ নয়- এরকম এক ডজন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। টেকনাফের নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্পে হামলা করে আনসার কমান্ডারকে খুন এবং অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটিয়েছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুরে আলম বাহিনী। তাকে আটক করে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। পরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় নুরে আলম। একাধিক সূত্রমতে, নুরে আলম বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে এখন দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী জকির আহমদ। সেলিম বাহিনী নামে আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে কয়েকটি ক্যাম্প। হাকিম ডাকাত, জকির, সেলিম ও মুন্না গ্রুপের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ধরতে গত ছয় মাসে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাব। এসব অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন থেকে হেলিকপ্টার। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি আস্তানা। কিন্তু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের শীর্ষ কাউকে ধরা যায়নি।
মায়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের উপচে পড়া ভয়াবহ মানবের চাপ কিছুটা হলেও কমানোর লক্ষ্যে, প্রায় লাখ খানেক রোহিঙ্গা দেশের সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর নামক স্থানে স্থানান্তর করার লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেখানে উন্নত মানের আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে। এই ভাষানচরে তাদের জন্য আলিশান আবাসস্থল নির্মানের জন্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করেছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ভাসানচর নামক স্থানে অবস্থান। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে, সুন্দর ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো।
ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকার সর্বাধুনিক ব্যবস্থা রাখার পরও, রোহিঙ্গাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অনাগ্রহ, অনীহা ও দ্বিধাদ্বন্ধ ছিল লক্ষ্য করার মত। তারা কোনভাবেই যেতে চান না সেখানে। কত বোঝানো হচ্ছে, প্রকৃতার্থে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অবশেষে সম্প্রতি বিশাল বহর নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর পরিদর্শন করেছে। ২০১৭ সালের ২৫শে আগষ্ট বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্টি তাদের ভিটে-বাড়ি, স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ছেড়ে, বলতে গেলে প্রান বাচাতে, এক কাপড়ে, উখিয়া টেকনাফের মানবতাবাদি নাগরিকদের উদারতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মানবতার পরাকাষ্ট প্রদর্শনের সুবাদে সেসময়ে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্টি আমাদের দেশে চলে আসার সুযোগ প্রাপ্ত হয়। সেদিন মানবতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন দেখাতে গিয়ে আজ তারা আমাদের মাথায় চড়ে বসলো কিনা তা নিয়ে অনেকের নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে। তারা এখন আমাদের ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে । প্রায় ৪০ রোহিঙ্গা নেতা, উপনেতা বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রনে ভাসানচরের খুঁটিনাটি ঘুরে দেখলেন এক রকম ‘পিকনিক মুডে’। তারা ভাষানচরে গিয়ে অবকাঠামো, নির্মিত শেড, সুযোগ-সুবিধা ও খোলামেলা পরিবেশ দেখে খুবই খুশি ও আবেগে আপ্লুত ছিল। তারা ঘুরে ঘুরে, বিভিন্ন ক্যাপশনে ছবি তুলে, ভিডিও করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে তাদের বড় অর্জনের কথা বলতে শুনা গেছে কিন্তু ভাষানচর থেকে ফিরে এসে তাদের মধ্যে নানামুনির নানা মত হয়ে গেল! অনেকেই বলেন ঘর নাকি ছোট ! এই নেই, সেই নেই! আলিশান ঘর, ফ্ল্যাট এখন তাদের চাওয়া ও পাওয়ার অধিকার ! তারা কি জানে, বাংলাদেশেই কোটি মানুষের এখনও মাথা গোঁজানোর নির্দিষ্ট স্থান নেই, সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার সমুহ (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) এখনও সুদুর পরাহত। অন্যদিকে মাত্র তিন বছরে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে মানবতার আশ্রয় নিয়ে এখন ‘মগের মুল্লুকের শ্লোক ও অযৌক্তিক আবদার শোনাচ্ছে’-এটার শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে?একমাত্র মহান আল্লাহই ভাল জানেন !
পরিদর্শনকৃত রোহিঙ্গারা ও তাদের জনগোষ্টি ক্যাম্পে এসে বলতে শুনা যাচ্ছে ভাসানচরের পরিবেশ ভালো না। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ঝড় ঝঞ্জা, অতি বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি হতে পারে, ওই এলাকা নিচু, পানি উঠলে নাকি মানুষ মারা যাবে- কত কী নানার বাড়ির আবদার! রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন টালবাহানা, চাহিদা ও আবদারের কথা শুনলে অবাক না হয়ে পারা যায় না! আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাইবার ক্রাইম দমন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব রোধে কাজ করছে, কিন্তু সাধারণ রোহিঙ্গা ও তাদের নেতারা যে প্রকাশ্যে গুজব ছড়াচ্ছেন তা প্রতিরোধ করবে কীভাবে? এমনকি ক্যাম্প ছেড়ে যে গুটি কয়েক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে একজন রোহিঙ্গা নেতা প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার খবরা-খবর বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে। মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে, বাংলাদেশ তাই নানামুখী সংকটে। (চলবে………)
০৯-অক্টোবর-২০২০।
(তথ্যসূত্রঃ দৈনিক সংবাদপত্রসমূহ)
এম আর আয়াজ রবি।
(লেখক, কলামিষ্ট ও মানবাধিকারকর্মী)