
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকায় গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তীর নাম থাকার প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ সমাজ তান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে নগরীর ফকিরবাড়ি রোড থেকে বাসদের বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে মিছিলটি বের করা হয়।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তীর মেয়ে বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণসড়ক প্রদিক্ষন করে।
ADVERTISEMENT
এর আগে বাসদের বরিশাল জেলা শাখার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী । এ সময় তিনি বলেন, আমার বাবা একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া আমার দাদু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুরমা উষা রানী চক্রবর্ত্তী। শহীদ বিধবা, যিনি সারাজীবন এ শোক বয়ে বেড়িয়েছেন। রাষ্ট্র তাকে স্বীকৃতি দিলো রাজাকারের তালিকায় তার নামটি অন্তর্ভুক্ত করে। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবার জন্য ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, এ রকম একটি তালিকায় বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আসাকে উদ্দশ্যেমূলক বলে মনে করি। ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও ভুয়া তালিকা বাতিলের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মনীষা চক্রবর্ত্তীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন মনীষা চক্রবর্ত্তী। সেখানে তিনি লিখেছেন, মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুরমার নাম প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, আমার বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং ১১২ পৃষ্ঠা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন। আজ রাজাকারের তালিকায় ৬৩ নম্বর রাজাকার তিনি। আমার ঠাকুরদা অ্যাডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মনীষা চক্রবর্ত্তী আরও লিখেছেন, শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগ সরকারকে। আমার দল বাসদ আমাকে শিখিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে। মিছিল থেকে গ্রেফতার করে থানায় নির্যাতন করে ওরা বলেছিল আন্দোলন যেন না করি, নির্বাচনে যেন অংশ না নিই। রাজি না হওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে অজামিনযোগ্য মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। আমরা জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি। ভয় দেখিয়ে বা বিপদে ফেলে আমাদের কিছু করা যাবে না। অভুক্ত-অর্ধভুক্ত গরিব খেটে খাওয়া মানুষ আছে আমাদের দলে। আছে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। অতীতের মতো আজ এবং আগামীতে আপনাদের পাশে পাব সেই প্রত্যাশা রাখছি।