শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন

শিরোনামঃ
কক্সবাজারে বৃষ্টির রেকর্ড ২৪ ঘণ্টায় ৪০১ মিলিমিটার পাহাড় ধসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩ জনের মৃ’ত্যু কক্সবাজারে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ জনের মৃ’ত্যু প্রতিষ্টাতা কমিটির উদ্যোগে রামু প্রেস ক্লাবের ৩৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত  নরসিংদীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য জনতা জুটমিল বন্ধ ঘোষণা নরসিংদীতে কারাগার থেকে লুট হওয়া শটগান ও চায়নিজ রাইফেলের ম্যাগজিন উদ্ধার উখিয়ায় কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন উখিয়ায় অরক্ষিত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির হিড়িক, আইনের কোন বালাই নাই সিলেটে বিমান থেকে উখিয়ার সালাউদ্দিন র‍্যাবের হাতে আটক।  বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গতিধারা নতুন করে বিনির্মাণ করতে হবে ” মুহাম্মদ শাহজাহান
মৃত ব্যক্তির নামে সরকারি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন!

মৃত ব্যক্তির নামে সরকারি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন!

সীমান্তবাংলা ডেক্স : অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ শেষে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন একজন মৃত ব্যক্তি! এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের ইজিপিপির চলমান প্রকল্পেও শ্রমিকদের তালিকায় ওই ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত রেখেই কাজ দেখানো হচ্ছে। জামালপুরের মেলান্দহ উপে ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নে ইজিপিপি প্রকল্পের কাজে এমন অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে জানা যায়, জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাহেতপাড়া গ্রামের চান মিয়া চারজন ছেলে ও একজন মেয়ে সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী এবং ছোট ছেলে আপেল শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় ছেলে আসলাম বর্তমানে বেকার এবং তৃতীয় ছেলে আছাদুজ্জামান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগের তিন মাস আছাদুজ্জামান জামালপুর এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ইজিপিপি প্রকল্পের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের শ্রমিকদের তালিকায় ইউপি সদস্য চান মিয়ার দুই ছেলে আসলাম ও মৃত আছাদুজ্জামানের নাম রয়েছে। এই দুজনের নামে বছর শেষে টাকাও উত্তোলন করা হচ্ছে।

ইজিপিপি প্রকল্পে শ্রমিকদের তালিকায় হতদরিদ্রদের নাম থাকার কথা থাকলেও স্বচ্ছল ইউপি সদস্য চান মিয়ার মৃত ছেলে ও স্বশিক্ষিত ছেলের নাম থাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।

এসব বিষয়ে চান মিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার ছেলে আছাদুজ্জামান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দেড় বছর আগে। ইজিপিপি প্রকল্পের ২০২০-২১ অর্থ বছরের শ্রমিকদের তালিকায় আছাদের নাম আমি দেইনি। আমার ছোট ছেলে আপেল আছাদের ভোটার কার্ড দিয়ে নাম দিছে। আমি এই বিষয়টা জানতাম না। ছোট ছেলেটা অনার্সে পড়ে। ভাবছে ভাইয়ের ভোটার কার্ডটি দিয়ে আমি মাটি কাটমু। তাইলেই হবো। আসলে কাজটা আমাদের ভুল হইছে।’

২০১৯-২০ অর্থ বছরের শ্রমিকদের তালিকায় আছাদুজ্জামানের নাম এবং টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মরার পর ওর নামে ব্যাংক থেকে কোনো টাকা তুলি নাই আমি। কেউ হয়তোবা টাকা তুলে থাকতে পারে। এই বিষয়টা আমার জানা নেই।’

তার দুই ছেলের নাম শ্রমিকদের তালিকায় কেন দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার তৃতীয় ছেলে আছাদুজ্জামানতো মারাই গেছে। দ্বিতীয় ছেলে আসলামের নাম দিছি। কারণ সে এখন বেকার। বেকু দিয়ে প্রকল্পের মাটি কাটলে আসলাম আমার কাজে সাহায্য করে। তাই আসলামের নাম দিছি। এখন আমার তো টাকা পয়সা থাকতে পারে। কিন্তু আমার ছেলেদের তো নিজের কিছু নাই। তাই ওদের নাম দিছি।’

ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের হাজরাবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করার পর তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ইজিপিপি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির সাত হাজার টাকা ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ হয়। ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আছাদুজ্জামানের নামে বরাদ্দকৃত সাত হাজার টাকার চেকটিও দেয়া হয়েছে।

মৃত ব্যাক্তি কিভাবে চেক উত্তোলন করে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের ম্যানেজোর বলেন, ‘আমি ছয় মাস আগে এই শাখায় যোগদান করেছি। মৃত ব্যক্তির নামে কিভাবে চেক ইস্যু করা হয় বা মৃত ব্যক্তি কিভাবে চেক গ্রহণ করে, এই বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার আগের কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।’

মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপ সই জাল করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এই বিষয়ে ইজিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির জেলা পর্যায়ের সদস্য ও জেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইজিপিপি প্রকল্পে কেউ মাটি না কাটলে টাকা দেয়া হয় না। আর শ্রমিককে স্বশরীরে গিয়ে টিপ সই বা স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে চেক উত্তোলন করতে হয়। তাহলে এখানে ধরাই যায়- চান মিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পরও প্রকল্পের মাটি কেটেছে এবং ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পতে শুরু থেকেই যে দুর্ণীতি হয় তারই জ্বলন্ত প্রমাণ হলো চান মিয়ার এই ঘটনা। এই প্রকল্পটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে হয় শুধু মাত্র হতদরিদ্রদের উপকারের জন্য। কিন্তু বাস্তবে গরীবরা এখান থেকে কোনো উপকার পাচ্ছে না। কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি এই প্রকল্প থেকে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি এই বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।’

এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’

২১জানুয়ারি/কেএম/এডমিন/ইবনে

সংবাদটি শেয়ার করুন

পোষ্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© কপিরাইট ২০১০ - ২০২৪ সীমান্ত বাংলা >> এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ

Design & Developed by Ecare Solutions