প্রতিনিধি ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ , ২:৪২:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের মানুষ বড় অভাগা। এদেশের মানুষ খুব অল্পে তুষ্ট। তবুও শাসকরা তাদের সেই সামান্য অধিকারটুকুও দিতে চায় না। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- ‘পানি গড়িয়ে নিচের দিকে যায়।’ তেমনি শাসকের শোষণের সব শেষ প্রতিফল ভোগ করে সাধারণ দরিদ্র মানুষ। আমাদের দেশের আজকের এ উন্নতি কিছুদিন আগেও ছিল না। নব্বইয়ের শুরুতে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসার পরও সাধারণ মানুষ সেই গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে পারছিল না। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর দেশের ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। অনেক এলাকার কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। কিন্তু অন্য কোনো উপায় না থাকায় কৃষককে আবারো লাঙল কাঁধে মাঠেই ফিরে যেতে হয়। বছরের পর বছর এভাবেই কাটে তাদের জীবন। ফসলের হাসিই একমাত্র তাদের জীবনে হাসি ফোটাতে পারে। তাই ফসলের পরিচর্যাই সকল কৃষকের ধ্যান-জ্ঞান। ফসলের মাঠ তার সন্তান সমতুল্য। ফসলের মাঠে পোকার আক্রমণ হলে সে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশকের জন্য হন্যে হয়ে যায় সে। আবার কখনো ভালো ফসল পাবার জন্য সারের জন্য মরিয়া হয়ে ছোটে। এ যেন প্রতিটি ফসল রোপণ আর তোলার মাঝে নিত্যদিনের সংগ্রাম। কিন্তু সেই সংগ্রাম বেদনাবিধুর হয়ে যায় যখন সে তার ফসলের জন্য সার-কীটনাশক পায় না। তার চেয়ে নিষ্ঠুর ঘটনা হলো সার-কীটনাশকের দাবিতে কৃষকের মিছিলে যখন পুলিশ গুলি করে পাখির মতো সেই নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করে। এটা কোনো কাল্পনিক ঘটনা নয়, এটা এই বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে বিএনপির শাসনামলের ঘটনা। এই ঘটনায় কৃষকের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, তাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রতিবাদ আর সান্ত¦না দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তখন তিনি। শাসকের বুলেটের গুলিতে শুধুমাত্র ১৭ জন কৃষকই প্রাণ হারাননি, সার না পেয়ে মাঠ হয়েছে ফসল শূন্য। দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়েছে। কিন্তু শাসকের হৃদয় গলেনি বাংলার প্রাণ কৃষক সমাজের জন্য। ক্ষমতার পালাবদলে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই বাংলার দুঃখী মানুষের নয়নের মণি জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন কৃষক তথা কৃষি খাতের জন্য। সর্বপ্রথম তিনি কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকির ঘোষণা দিলেন। আজন্ম যারা এদেশে দারিদ্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় সেই বিদেশি শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসররা তীব্র সমালোচনা শুরু করলেন। বাধা দিতে চাইলেন নানাভাবে। সাহায্য সংস্থাগুলো বাজেট ঘাটতির কথা বলে এ সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বললেন। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বললেন কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্র্ণ হলে আর বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না। উন্নয়ন ব্যয়ও নাকি মেটানো যাবে না। অর্থাৎ দেশের মধ্যেই একটা গোষ্ঠী এদেশের দরিদ্রতম মানুষকে আজীবন দরিদ্র করে রাখার কৌশলকে বেছে নিয়েছেন। শুধু একজনই এগিয়ে এসেছেন দশকের পর দশক চলে আসা এই অন্যায় আর শোষকের শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। শোষিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে তিনি হয়েছেন অগ্রগণ্য। তার এ পথচলায় সাথে নিয়েছেন আরেক দূরদর্শী রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরীকে। প্রধানমন্ত্রী দিলেন দিক-নির্দেশনা, মতিয়া চৌধুরী কৃষিমন্ত্রী হিসাবে সেই দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। বললেন, এদেশের মানুষের প্রধান সমস্যা ক্ষুধা। ক্ষুধা মেটাতে পারলে অন্য সব সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে। এ পরিকল্পার অংশ হিসাবে সার-কীটনাশকে ভর্তুকি প্রদান শুরু করলো সরকার। ক্ষেত্র বিশেষে বিনামূল্যে সার প্রদান করা হলো। এই সার-কীটনাশক শুধুমাত্র কাগজে-কলমে নয়, প্রান্তিক কৃষকের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলেন। কৃষক মনোবল ফিরে পেল, তারা বুঝতে পারলো বঙ্গবন্ধুকন্যা তাদের পাশে আছেন, তাদেরকে কেউ অধিকার বঞ্চিত করতে পারবে না। দ্বিগুণ উৎসাহে কৃষক কৃষিকাজে মনোযোগী হলো। মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যে দেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলো। সেই পথ ছিল বন্ধুর, বর্ণনার মতো এতটা সহজ ছিল না। বিদেশিদের রক্তচক্ষু তখনো বন্ধ হয়নি। যে বিদেশিরা তাদের দেশের কৃষকদের এত ভর্তুকি দেন, তারা আমাদের দরিদ্র কৃষকদের ব্যাপারে বড় হিসেবী। আসলে এটা দরিদ্র দেশগুলোকে দারিদ্র্যের নাগপাশে বন্দি করে রাখার কৌশল মাত্র। ইউরোপে একটি গাভী প্রতিপালনের জন্য একজন খামারিকে প্রতি মাসে বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ হাজার টাকার সমপরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হলেও বাংলাদেশে কৃষকদের বছরে ১০০০ টাকাও ভর্তুকি দেওয়া যাবে না! সরকার এসব বিদেশি চাপ উপেক্ষা করে কৃষকের জন্য আরো সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করলেন। যে কৃষিঋষণ ছিল কৃষকের কাছে স্বপ্নের ধন, সেই কৃষিঋণ নিয়ে এলেন কৃষকের দোরগোড়ায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকই বর্গাচাষি, সে অন্যের জমি চাষ করে ফসল ফলায়। পূর্বে কৃষিঋণ পেতে হলে জমির মালিককে ব্যাংকে জমি বন্ধক রাখতে হতো। তাই খুব স্বাভাবিক নিয়মে, কোনো জমির মালিকই নিজের জমি বন্ধক রেখে বর্গাচাষির হাতে ঋণের টাকা তুলে দিতেন না। শুধু যেসব কৃষক নিজের জমি চাষ করতেন তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কৃষিঋণ। শেখ হাসিনার সরকার সকল বাধা অতিক্রম করে যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বর্গাচাষিদের ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিলেন। মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দিলেন কৃষকদের। এ যেন এক রেনেসাঁর অভ্যুদয় হলো নীরবে-নিভৃতে। সরকার সংসদে সভা-সেমিনারে দেশি-বিদেশি দাতা আর গবেষকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন কৃষক, এদেশের গরিব খেটে খাওয়া মানুষ কখনো ধনীদের মতো ঋণখেলাপি নয়। তারা তাদের প্রাপ্য সুযোগ যেমন কাজে লাগাতে জানে তেমনি জানে সেই প্রাপ্ত সুযোগের প্রতিদান দিতে। সেই প্রতিদান হলো মাঠে মাঠে ফসলের সমারোহ। এই সবই দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব হলো একজন মানুষের দূরদর্শী ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য প্রগাঢ় মমত্ববোধের কারণে। যে মাটি ও মানুষের জন্য তার রাজনীতি, সেই রাজনীতির সম্পূর্ণ সুফল তিনি নিয়ে গেলেন মাটি ও মানুষের কাছে। তবে এই প্রাপ্তিকে ধরে রাখার জন্য এখনো থেমে নেই তিনি। জনবহুল এই দেশে প্রতি বছর মানুষ বাড়ছে, কমছে ফসলি জমি। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে খাদ্য উৎপাদনকে ধরে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। এছাড়া দুর্যোগ-দুর্বিপাকে খাদ্য উৎপাদন যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে সরকারিভাবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ তথা টেকসই, নিরাপদ, লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে কৃষি উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূউপরিস্থ সেচ সুবিধার প্রসার, কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, কৃষি খাতে পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ, ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খামার যান্ত্রিকীকরণসহ পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে সংগতিপূর্র্ণ বিভিন্ন ফসলের উন্নত, অধিক ফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত এবং কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও হাওর এলাকায় পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণ ও একাধিক ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও প্রান্তিক কৃষকদের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে নিয়মিতভাবে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পণ্যের রপ্তানি আয় প্রায় ৫৫ কোটি ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় হচ্ছে প্রায় ৬৮ কোটি ডলার। কৃষি খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আগের বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। কৃষি খাতের মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি ৪৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কৃষি ক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রতিকূল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কৃষি কর্মসূচি গ্রহণ, সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি উত্তোলনের সতর্কতার বিষয় যুক্ত করে ২০১৩ সালের কৃষি নীতিমালাকে পরিবর্তন করে নতুন ‘জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। কোনো বস্তুকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে রূপান্তরের পর তা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হলো ন্যানো প্রযুক্তি। কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর (অর্থাৎ Transfer of Technology) ও কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি উপকরণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ, জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষির পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ আঞ্চলিক কৃষি, বিশেষায়িত কৃষি, মেধাস্বত্ব, জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ফসলের রোগ, কৃষিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্তকরণ, ফসলের জাতভিত্তিক পুষ্টি চাহিদা নির্ণয় ও পুষ্টি আহরণ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ন্যানো সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন সম্ভবপর হবে। ‘কৃষিতে ক্রপ জোনিং ম্যাপ’ ভিশন ডকুমেন্ট ২০৩০ প্রণয়ন, ১৭টি ফসলের হাইব্রিডসহ ২৮টি উচ্চফলনশীল জাত এবং ২১টি ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ৫টি ধানের জাত উদ্ভাবন, জলমগ্নতা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ৭টি উফশী জাত ও পাটপণ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাটের মানোন্নয়ন করা হয়েছে। পাটের সুতা ব্যবহার করে জুট-কটন ফেব্রিক তৈরি করে তা দিয়ে পণ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার বিপরীতে আবাদযোগ্য কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারের এসকল পদক্ষেপের কারণেই চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয় দেশ। তাছাড়া ফল উৎপাদনে পৃথিবীর ২৮তম। তন্মধ্যে আম উৎপাদনে ৭ম এবং পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাল ৩৩৮.১৩ লাখ মেট্রিক টন, আলু ১১৩.৩২ লাখ মেট্রিক টন, ডাল জাতীয় ফসল ১০.২৬ লাখ মেট্রিক টন, তেল জাতীয় ফসল ১০.৫৮ লাখ মেট্রিক টন এবং মশলা জাতীয় ফসল ৩৫.৬০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। ফসলের ১.৩৭ লাখ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন এবং ১.২৬ মেট্রিক টন বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। বিদেশে তাজা শাক-সবজি ও ফল-মূল রপ্তানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত করা হয়েছে। একই সময়ে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আলু রপ্তানি করা হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য বিশে^র ৮২টি দেশে রপ্তানি হয়েছে। যার রপ্তানি মূল্য ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪১ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে, যা ২০০৬ সালে ছিল ২১ লাখ। বর্তমান সরকার কৃষকদের ভর্তুকি হিসাবে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছে যদিও ২০০৬ সালে তা ছিল ৭২৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬.৮৬% বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এখন সরকারের নির্দেশে সর্বোচ্চ ৯% সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৬০০ কোটি টাকার তহবিল বর্গাচাষিদের মধ্যে ব্র্যাকের মাধ্যমে বিতরণ অব্যাহত থাকবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ব্যাপারে ৩০% – ৫০% ভর্তুকি দিচ্ছে যাতে করে কৃষক আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষি খাত সম্প্রসারিত করতে পারে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে এই যে নানা পদক্ষেপ এর সুফল ভোগ করছে সারা দেশ। তবে প্রান্তিক কৃষকরা স্বাবলম্বী হওয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে দ্রুততার সঙ্গে। সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কথা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষুধা দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র মানুষের অধিকাংশ সমস্যারও সমাধান হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্ম উন্নয়ন প্রবন্ধে তিনি সত্যিকার উন্নয়নের জন্য কৃষির উন্নয়নে জোর দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন আমের পরিবর্তে আপেলের চাষ করলে ভালো ফলন হবে না। মাটির গুণাগুণ ফিরিয়ে আনলে আবারো আমের ফলন ভালো হবে। প্রকৃতপক্ষে কবিগুরু এক দার্শনিকের মতো অর্থনীতির প্রতিপাদ্য বিষয়ে মূল কথাটাই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও কবি গুরুর সেই মর্মবাণী হৃদয়ে ধারণ করে সোনার বাংলার সোনার মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন গ্রামে বসেই শহরের সুবিধা পাওয়া যাবেÑ ‘গ্রাম হবে শহর।’ বাংলাদেশের কৃষিতে যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তাতে প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত হতে আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। দীর্ঘজীবী হোন প্রধানমন্ত্রী।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা