প্রতিনিধি ২৮ অক্টোবর ২০২০ , ১০:০৮:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
[ প্রথম পর্ব]
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রাকৃতিক নিদর্শন পাহাড় কেটে উজাড় করে, বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে,মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ও ‘ইকোসিস্টেম’ ধ্বংশ করে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভুমি সমুদ্র গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা সৃষ্ঠি হয়েছে। উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা যেমন, উখিয়া সদর, পুকুরিয়া, টাইপালং, ধুছরি, জাম্বনিয়া, পাতাবাড়ি, মৌলভী কাটা, মধুর ছড়া, কোট বাজার, রত্না পালং, জালিয়াপালং এর সোনার পাড়া, ইনানী, মনখালী এলাকা, হলুদিয়া পালং এর পাতাবাড়িসহ থাইংখালী, পালংখালী, বালুখালী,কুতুপালং,রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কুতুপালং এলাকার ‘কেশব বর ঘোনা,হাংগর ঘোনা, আজহাইয়া নামক স্থান ও অন্যান্য স্থান থেকে রাতের অন্ধকারে ও দিনে দুপুরে প্রাকৃতিক পেরেক খ্যাত টিলা, উপত্যকা ও বিভিন্ন পাহাড়সমুহ কেটে উজাড় করে দিচ্ছে এক শ্রেণির ‘পাহাড় খেকো’ ভুমিদস্যুরা।
পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের যেমন বিপর্যয় ঘটছে তেমনি বনভুমি ও বন্যপ্রাণির অস্তিত্বের উপর আঘাত হানছে চরমভাবে। জলবায়ু ও ইকোসিস্টেমে পড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের মারাত্মক ‘অশনি সংকেত’। যার ফলে প্রকৃতি তার আপন ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এ এলাকার পাহাড় ও বনভুমির উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারনে প্রকৃতির রক্ষাকবচ পাহাড় ও বনভুমির উপর পড়ছে নিয়ন্ত্রনহীন চাপ, ফলে ঘটছে জলবায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি ও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। এসব পাহাড় কাটা ও বনভুমি ধ্বংশের কুশিলব হিসেবে কাজ করছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ‘পাহাড় খেকো’ সিন্ডিকেট চক্র-যারা প্রাকৃতিক পাহাড় সমূহ নির্বিচারে কেটে উন্নয়নের নামে সমতল চাষযোগ্য জমি ভরাট করে একদিকে চাষযোগ্য ভুমির পরিমান কমছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জলবায়ুর উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারের আরাকান ও অন্যান্য প্রদেশ থেকে জোরপুর্বক বাস্তুহারা রোহিঙ্গা জনগোষ্টি সেই দেশের সামরিক জান্তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবার জন্য গত ২০১৭ সালের ২৫শে আগষ্ট থেকে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেবার সুবাদে, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রায় ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপিত করে তাদেরকে অবস্থান করার সুযোগ করে দেয়। এই সুযোগে দেশি, বিদেশি অসংখ্য এনজিও, আইএনজিও কাজ করার অনুমতিপ্রাপ্ত হয় এবং সাথে অসংখ্য চাকুরীজীবি কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক, কর্মী উক্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করার সুযোগ প্রাপ্ত হয়। সাথে রয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরনের জন্য প্রতিদিন শত শত গাড়ি উক্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন এনজিও ও আই এনজিও কর্মীদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেবাধর্মী কার্যকলাপ পরিচালনা করতে গিয়ে খাদ্য ও দ্রব্যসামগ্রী আনা নেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
অধিকন্তু অধিকসংখ্যক চাকুরীজীবিদের বসবাস ও খাদ্যদ্রব্য রাখার ‘ওয়্যার হাউজ’ সংকট ও এনজিও সংস্থাগুলোর অফিস ঘর করার প্রয়োজন পড়ায়, দিনে দিনে অনেক দালান, কোঠা, বাড়িঘর, শেড তৈরি করার হিড়িক পড়ে যাবার কারনে, এতদ অঞ্চলের আশে পাশের বিভিন্ন পাহাড় ও বনভুমি উজাড় করে মাটি ও কাঁচা-পাকা ঘর/বাসাবাড়ি নির্মানের কারনে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অত্র প্রতিবেদক,উখিয়া বনবিভাগের কুতুপালং এলাকার,কুতুপালং হাইস্কুলের পশ্চিম পার্শ্বে, কেশব বর ঘোনা, ধইল্ল্যাঘোনা, হাংগর ঘোনা ও উত্তর পুকুরিয়া নামক স্থান পরিদর্শন করে দেখতে পান,একশ্রেণির ‘পাহাড় খেকো’ প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, প্রাকৃতিক পেরেকখ্যাত উঁচু টিলা, উপত্যকা, পাহাড় কেটে এবং বনভুমি ধ্বংশ করে অত্র এলাকাকে রীতিমত বিরান ভুমিতে পরিনত করতে যাচ্ছে। পরিবেশবাদীদের অভিমত যেভাবে একের পর এক সরকারি বনভুমির পাহাড় কর্তন করে মাটি পাচার করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসব চলছে, নিকট ভবিষ্যতে অত্র এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হতে বেশি সময় হয়ত লাগবে না। আবার অনেকেই মন্তব্য করছেন, এভাবে পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যকলাপ চললেও, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর ও উপজেলা প্রশাসন রহস্যনক নীরবতার কারনে জনেমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে বৈকি।
অত্র প্রতিবেদক সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পান, উখিয়া বনবিটের আওতায়, কুতুপালং এলাকায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল পাহাড়ের মাটি কেটে দিবারাত্রি ট্রাক ও ডাম্পারযোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রী ও স্থাপনা করার কাজে সরবরাহ করে আসছে। উক্ত স্থাপনাসমুহ উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যেমন, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশের এলাকা, রাস্তার মাথা ও আশে পাশের এলাকা, উখিয়া সদর ষ্টেশন আশপাশ এলাকা, কোট বাজার ষ্টেশনের আশ পাশে্র এলাকা, মরিচ্যা বাজার, ইনানী, সোনার পাড়া, ঘুংধুম, বালুখালী, থাইংকালী,পালংখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতের অন্ধকারে ও প্রকাশ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, পরিবেশবাদী, থানা প্রশাসন, বনপ্রশাসন ও স্থানীয় নেতানের্তৃদের ম্যানেজ করে অবৈধ পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী সিন্ডিকেটচক্র-যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে প্রকৃতির উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারন হয়ে উঠছে দিনকে দিন। চলবে……….
এম আর আয়াজ রবি।
( লেখক, কলামিষ্ট ও মানবাধিকারকর্মী )