প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৭:৪৮:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
সীমান্ত বাংলা ডেস্ক : করোনাকালীন প্রণোদনা, শস্য ও ফসল চাষ, সিএমএসএমই ও মুজিববর্ষ- এই চারটি স্কিমে প্রায় পাঁচ মাসে এক লাখ এক হাজার ৭৬৫ জনকে ঋণ বিতরণ করেছে কৃষি ব্যাংক। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর গত এপ্রিল থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত এসব স্কিমে মোট এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। করোনাকালীন সংকট এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ জেলার কৃষিক্ষেত্র পুনরায় শস্য-ফসলাদিতে ভরে তুলতে এই ঋণ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত মার্চে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিতে বড় সংকটের মুখে পড়ে কৃষিখাত। কৃষি বাঁচাতে সরকার এই খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে কৃষি ব্যাংককে এক হাজার ১৯৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নির্দেশনা মেনে কৃষি ব্যাংক এরই মধ্যে ৩৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।
কৃষি ব্যাংকের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, করোনাকালীন প্রণোদনা, কৃষি ও শস্য, মুজিববর্ষ ও সিএমএসএমই সবমিলিয়ে কৃষি ব্যাংক প্রায় পাঁচ মাসে এক লাখ এক হাজার ৭৬৫ জন ঋণ দিয়েছে। করোনাকালীন সংকট এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ জেলার কৃষিক্ষেত্র পুনরায় শস্য-ফসলাদিতে ভরে তুলতে এই ঋণ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, করোনাকালে সরকারের নির্দেশনা মেনে কৃষি ব্যাংকের কোনো শাখাই বন্ধ ছিল না। এই সময়কালে ব্যাংকটির তিন শতাধিক কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত এপ্রিলে সরকার কৃষিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর কৃষি ব্যাংক ১১৯৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ঋণ বিতরণ করছে। ২০ আগস্ট পর্যন্ত ২৫ হাজার ৩৫ জন কৃষকে ৪৭০ কোটি ৬৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৪৭ টাকা বিতরণ করেছে। অর্থাৎ লক্ষমাত্রার ৩৯ শতাংশ। বাকি ৭২৮ কোটি টাকা বিতরণে দিন ২৭ কোটি টাকার লক্ষমমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করছে। আগামী ২৭ দিনের মধ্যে এ তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। কারণ আমরা ২০ আগস্ট একদিনে ৩২ কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করেছি।
ব্যাংকটি আরেকটি প্রণোদনা ঋণ ৪ শতাংশ সুদে শস্য ও ফসল চাষে ৪৯ হাজার ৯১৫ জন কৃষকে ৩৭৫ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ২০ আগস্ট একদিনে ব্যাংকটি খাতে ঋণ বিতরণ করেছে আট কোটি ৮৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
সিএমএসএমইতে ১৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত এক হাজার ৩৪৪ জনকে ৫৩ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪৩ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ অর্জন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বাকি অংশ আগামী ৪৭ দিনে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। গত ২০ আগস্ট একদিনে এক কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে কৃষি ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ শতাংশ সুদে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটি ১৮৬ কোটি ৮৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬২ শতাংশ অর্জন হয়েছে।
কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া ঢাকা টাইমসকে জানান, বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরূদ্ধানে প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্ঠা করছি।
আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ‘অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে দরকার ক্ষতিগ্রস্তদের যতদ্রুত সম্ভব ঋণ দেয়া। এটি পালনে আমরা দৈনিক লক্ষমাত্রা নিয়ে কাজ করছি। একারণে আমাদের এক হাজার ৩৮টি শাখা করোনার মধ্যেও খোলা ছিল। আমিসহ আমাদের কোনো কর্মকর্তা করোনার মধ্যেও অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন না। এ পর্যন্ত আমাদের চারজন সহকর্মী করোনায় মারা গেছেন এবং তিন শতাধিক আক্রান্ত হয়েছেন।’
করোনা মহামারির শুরু থেকেই প্রত্যেক শাখার কর্মীদের নিয়ম করে খোঁজখবর নেওয়া হয় উল্লেখ করে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এছাড়া অনলাইন পোর্টাল সফট্যাওয়ারের মাধ্যমে শাখায় কী অবস্থা তাও দেখা হয়। কোনো শাখার দুর্বলতা দেখতে পেলে তা তাদেরকে বোঝানো এবং এবং কেন লক্ষ্যমাত্রা পরিপালনে ব্যর্থ তাও জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনায় বিধস্ত অর্থনীতি পুনরূদ্ধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে কৃষি ব্যাংক।’
ঢাকাটাইমস/০২সেপ্টেম্বর/এডমিন ইবনে যায়েদ