থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। উদযাপনকে ঘিরে কোনো হুমকি না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে এবারো গৃহবন্দি করে রাখা হচ্ছে থার্টিফার্স্ট নাইটের উদযাপনকে। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, দেশের কোথাও থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে খোলা জায়গায়, রাস্তা ও ফ্লাইওভারে কনসার্ট বা নাচ-গানের আয়োজন করা যাবে না। তবে চার দেয়ালের ভেতরে অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে। প্রয়োজনে পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হবে।

থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর সকল ইউনিটে এক বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা, রেঞ্জ ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়িয়ে তল্লাশি বাড়ানোসহ বিশেষ বিশেষ এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত করা হবে। সারা দেশের মদের বার বন্ধ থাকবে। আতশবাজি-পটকা বিক্রি ও ফোটানো নিষিদ্ধ থাকবে।

ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। চেকপোস্ট বৃদ্ধি করাসহ আমাদের নজরদারি বাড়ানো হবে। বিশেষ বিশেষ জায়গায় আমাদের পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো নির্দেশনা মোতাবেক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, থার্টিফার্স্ট উদযাপনকে কেন্দ্র করে সব অনুষ্ঠানস্থলে সিসিটিভি স্থাপন, আর্চওয়ে ও সোয়াইপের ব্যবস্থা থাকবে। অনুষ্ঠানের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে এবং পর্যাপ্ত চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুলশান, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, ধানমণ্ডি, বারিধারা, বাড্ডা, মিরপুর, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, টিএসসি, গুলশান, হাতিরঝিল এলাকায় সাধারণ জনগণের প্রবেশ সীমিত করা হবে। পুলিশ টহল জোরদারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান এবং সোয়াটের টিম প্রস্তুত থাকবে।

বিগত কয়েক বছরের মতো এবারো থার্টিফার্স্ট নাইটে দেশের কোথাও কোনো আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আতশবাজি ও পটকা বিক্রি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ডিএমপি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, লালবাগ এলাকায় আশবাজি ও পটকা ফোটানো বন্ধ করতে ইতিমধ্যে মাইকিং এবং আশপাশের এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আতশবাজি বিক্রি ও বহন বন্ধ করতে প্রত্যেকটি থানার অফিসারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ১০টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষদের কোনো বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশের মদের বার ও দোকানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও এ ব্যাপারে নজরদারি অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রোর উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে আমাদের কঠোর নজরদারি থাকবে। মহানগরীর বারগুলোর সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে কোনো বার যাতে খোলা না থাকে এবং মদ বিক্রি হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য ঢাকা মহানগরীতে চারটি টিম গঠন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তবে পাঁচ তারকা হোটেলগুলো খোলা থাকবে। যাতে বিদেশিদের প্রয়োজন মেটাতে অসুবিধা না হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং করবে পুলিশ। যাতে থার্টিফার্স্টকে কেন্দ্র করে কেউ কোনো ধরনের অপপ্রচার বা গুজব ছড়াতে না পারে।

পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন এলাকায় আসা অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও যথাযথ তল্লাশির মাধ্যমে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, আমরা কক্সবাজারকে ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের মোবাইল প্যাট্রল ও মোটরসাইকেল প্যাট্রল থাকবে। বিশেষ করে যেসব স্থানে পর্যটকদের বেশি আনাগোনা থাকবে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়া সাদা পোশাকে নজরদারি ও চেকপোস্ট বাড়ানো হবে।