কলিম উল্লাহ উখিয়া/
মাহমুদুল হাসান, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধিঃ
বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় “অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করাতেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ।
রবিবার ১৭ জানুয়ারি ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি আমাদের হাতে আসে।
সেখানে দেখা যায়, ঘুমধুমে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি সম্প্রতি আলোচিত একটি বিষয়। সুকৌশল ও ছলচাতুরীর মাধ্যমে, সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগিতায় ভুল তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকের জাতীয় পরিচয় পত্র প্রাপ্তির বিষয়টি সর্বপ্রথম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন ঘুমধুমের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বিগত ১৩/০৩/২০১৮ তারিখে স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকাসহ ভোটার বাতিলের জন্য আবেদন করেন।
৩ নং ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, “অত্র সংবাদে জনৈক হামিদ হোসেন আমার ‘বদন্যতায় ভোটার হয়েছেন’ বলে উল্ল্যেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেননা, জনৈক হামিদ হোসেন ১৯৯১ সালে ঘুমধুমের আশ্রয় নিয়ে আমার পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানের আমলে জন্ম নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে আমার কার্যকালে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করতে আবেদন করলে ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন সার্ভারের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এরশাদুল হকের যাচাই-বাছাই পূর্বক সার্ভারে তথ্য হালনাগাদ করে স্বাক্ষর করে সনাক্ত করে দিলে আমি নিবন্ধক হিসেবে স্বাক্ষর করি। অতএব, এধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে এই রোহিঙ্গা নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এছাড়াও ‘জন্ম নিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ, প্রত্যায়ন পত্র এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে প্রতিজনের কাছ থেকে এক থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করতেন’ মর্মে যে অসত্য ও মানহানিকর অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেননা, বিগত ২০১৫ সালে ভোটার তালিকায় ভুল-তথ্য দিয়ে, জাল-জালিয়াতি করে, স্থানীয়দের পিতা-মাতা দেখিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অত্র ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে সক্রিয় ছিল। ইতপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরভসমূহের বারবার তদন্তের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ চক্রটির বিপক্ষে বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার আদেশে নাইক্ষ্যংছড়ি নির্বাচন অফিসার আবু জাফর সালেহ বাদী হয়ে গত ৩১/১২/২০২০ তারিখে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জি আর ১(১)২০২১ নং মামলাটি দায়ের করেন। তাছাড়াও উক্ত সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব এরশাদুল হক আমার স্বাক্ষর জাল করে অসংখ্য রোহিঙ্গা নাগরিককে জন্ম সনদ, জাতীয়তার সনদ, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে। তার বিরুদ্ধে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (স্থানীয় সরকার বিভাগ), বান্দরবান পার্বত্য জেলার তদন্তপূর্বক সচিব এরশাদুল হকের বিরুদ্ধে আমাকে বাদী হয়ে মামলা করার আদেশ প্রদান করেন, পরবর্তীতে উক্ত আদেশমূলে গত ৫/০১/২০২১ তারিখে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জি আর ৩(১)২০২১ নং মামলাটি দায়ের করি।
এমতাবস্থায়, সচিব এরশাদুল হক ও তার চক্রের অন্যান্য সদস্যরা পলাতক থেকে কতিপয় সাংবাদিকদের ভুল বুঝিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদপত্রে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে প্রকৃত অর্থে মামলা দুটির তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে উল্লিখিত শিরোনামের মানহানিকর সংবাদটি প্রকাশ করেছে।
সংবাদের শেষে জনৈক রশিদ আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বরাত দিয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন এবং মানহানিকর। উল্লেখ্য যে, আমার বিগত দুইবারের নির্বাচনে রশিদ আহমদ সাহেব আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সচিব এরশাদুল হকের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করে যাচ্ছেন বিভিন্ন দপ্তরে। ইতপূর্বে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাইক্ষ্যংছড়ির কার্যালয়ে এইসব অভিযোগের শুনানি হয়েছে, শুনানিতে অভিযোগের বিপক্ষে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত, কাগজ-পত্র উপস্থাপন করেছি।
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ আরো জানান, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ‘ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সব ধরনের কাগজ পত্র সংগ্রহ করতেন নিজেই’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য। ভোটার তালিকায় ভোটার অন্তর্ভূক্ত করার সময় তথ্য সংগ্রহকারীরা ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতে শুনানির মাধ্যমে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া কিছুই না।
উক্ত সংবাদের প্রতিবেদককে আমি সেসকল কাগজ পত্র স্বশরীরে এসে দেখে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তা না করে উক্ত প্রতিবেদক আমার প্রতিপক্ষ ও রোহিঙ্গা ভোটার করার জন্য সংঘবদ্ধ চক্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন অসত্য, ভিত্তিহীন সংবাদটি পরিবেশন করেন। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা গণমাধ্যমের অন্যতম মহান দায়িত্ব। তাই সম্মানিত সাংবাদিক ভাইদের প্রতি উদ্বাত্ত আহবান থাকবে বস্তুনিষ্ঠ, সত্য ও বাস্তব সম্মত সংবাদ পরিবেশন করে আপনারা আমাদের মতো জনপ্রতিনিধিদেরকে সহযোগিতা করলে আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আরো সচেষ্ট হব এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওত্তায় আনা সহজ হবে। এমন বিভ্রান্তিকর সংবাদ কখনোই কাম্য নয়।”
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ, গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইদের তার দপ্তরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত দোষী কারা বের করে সংবাদ পরিবেশনের উদ্বাত্ত আহবান জানান।
( সীমান্তবাংলা/ শা ম / ১৭ জানুয়ারী ২০২১)
© কপিরাইট ২০১০ - ২০২৪ সীমান্ত বাংলা >> এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Leave a Reply