কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটকের পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় হাজারো জনতা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা কুমিল্লা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেন।
দুপুর বারোটার দিকে যুবদল নেতা তৌহিদের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে হাজারো জনতা কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা তৌহিদের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তারা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিশাল মানববন্ধন করেন এবং একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে কিছু লোক তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। তারা জানান ঘরে অস্ত্র আছে। এরপর ঘর তল্লাশি করে কোনো অস্ত্র না পেলেও তৌহিদকে যৌথ বাহিনী আটক করে। কারণ জানতে চাইলে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনাকারীদের একজন জানান, কাউসার নামে একজনকে ধরতে হবে এজন্য তাকে নিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে।
তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, ‘রাতভর উৎকণ্ঠায় থাকার পর সকাল সাড়ে আটটার দিকে যৌথ বাহিনীর ওই টিম তৌহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে আসে। এ সময় তৌহিদকে মুমূর্ষু দেখা যাচ্ছিল।’
সকালে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন অভিযোগ করে তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, ‘কাউসার ও তার স্ত্রীকে ধরিয়ে দিলে তৌহিদকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান তারা। কিছুক্ষণ বাড়িতে অবস্থানের পর সেনা সদস্যরা তৌহিদকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে আবার চলে যায়। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে কোতোয়ালি থানার একজন পুলিশ অফিসারের ফোন পেয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে তৌহিদকে তারা মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদের ভাগ্নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহাবুবা উদ্দিন বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে সেনাবাহিনীর সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের সেনা আইনে বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবার বেলা সাড়ে বারোটার দিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনায় কুমিল্লা সদর সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ও ইটাল্লা গ্রামের মো. তৌহিদুল ইসলামকে তার বসতঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় যৌথ বাহিনী। তারপর শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মোরশেদ মোবাইল ফোনে তৌহিদের ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপুকে জানান, শহরতলীর গোমতী নদীর পাড়ের গোমতী বিলাশ নামক স্থানে আহত অবস্থায় তৌহিদ পড়ে রয়েছেন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। তখন তৌহিদের পরিবারের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে তৌহিদের লাশ দেখতে পান।
শুক্রবার রাতে নিহত যুবদল নেতা তৌহিদের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর ওই যুবদল নেতার মৃত্যু হয়। অমানবিক নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয় বলেও গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন। তিনি জানান তার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
কোতয়ালি থানার এসআই মোরশেদ জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোমতী নদীর পাড়ের ঝাকুনিপাড়ার গোমতী বিলাশে গিয়ে যখন সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে তৌহিদকে গাড়িতে ওঠানো হয়, তখনও তার প্রাণ ছিল। কিন্তু কুমেক হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।