
মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া : উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভীতিকর পরিস্থিতি এখনও কাটেনি। রোহিঙ্গা দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ ব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ জন প্রাণ হারিয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হামলায় গোটা এলাকা ভীত সন্ত্রস্থ। ঘটনার পরই উত্তেজনাপূর্ণ লম্বালিশয়া ক্যাম্প থেকে প্রায় শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও স্থানীয় দুইজন চালককে জবাই করে হত্যার প্রতিবাদে উখিয়া-টেকনাফ সড়কের নয়াপাড়া এলাকায় স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেছে। ঘটনার পরই পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের জিআইজি আনোয়ার হোসেন ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন এবং উখিয়া থানা পুলিশকে শৃংখলা বজায়ে সর্বাত্বক কাজ করার নির্দেশ দেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পের ভিতরে যাওয়া আসা, যান চলাচলসহ দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের হামলাও তান্ডবের প্রতিবাদে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নারী-পুরুষ বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেছে।
কুতুপালং ইস্টের ক্যাম্প ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বিরাজ করায় শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারকে অন্যত্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে নিহত ৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন পুলিশ প্রশাসন। নিহতরা হলো রোহিঙ্গা নেতা মুন্নার দুই ভাই মোহাম্মদুল্লাহ ওরফে গিয়াস উদ্দিন ও মো: ফারুক। অপর দুই জন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার দিলদার আহমদের ছেলে নুরুল বশর, একই এলাকার নোহা চালক নুর হোসেনের ছেলে নুরুল হুদা।
স্থানীয় বাসিন্দা নিহত নুরুল হুদার ছোট ভাই মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, নোহা চালক নুরুল বশরকে রোহিঙ্গা নেতা মুন্না মাস্টার ফোন দিয়ে তার বোনকে হ্নীলা ক্যাম্পের নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ী ভাড়া করে। ওই সময় নোহা চালক তার ভাইকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পে যায়। তখন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা নির্মম ভাবে তার ভাইসহ ৪জনকে জবাই করে হত্যা করে।
স্থানীয় যুবককে হত্যা অতপর ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী তান্ডব অব্যাহত থাকায় আইএসসিজি’র কো-অর্ডিনেটর সৈকত বিশ্বাস বলেছেন, সাধারণত ৪টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন এনজিও কর্মীর থাকার সুযোগ নেই। তবে বিদ্ধমান কয়েকটি ক্যাম্পে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে সকলকে সতর্কতার পাশাপাশি নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঘটনা পরবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। পরিদর্শন শেষে ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে ঘন্টাব্যাপী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার লোকজনের সাথে মতবিনিময় করেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পে সংঘটিত ঘটনায় ইতিমধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের আটক করতে যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যাম্পের বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। আইএসসিজি কর্মকর্তা নাঈমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মীদের বুধবার নিরাপদে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।