এখনো আড়ালে পুলিশকন্যা রুম্পার মৃত্যুরহস্য

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২০

পুলিশকন্যা রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা মারা যান ৪ ডিসেম্বর। প্রায় ১ মাস হতে চললেও এখনো উদঘাটিত হয়নি তার মৃত্যুরহস্য।

তবে তদন্ত সংশ্লিস্টরা বলছেন, রুম্পার মৃত্যু মৌচাকের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স ভবনের ছাদ থেকে পড়ে হয়েছে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেউ তাকে সেখান থেকে ফেলে দিয়েছে, নাকি সে নিজেই সেখান থেকে লাফিয়ে পড়েছে। এই প্রশ্নের সমাধান এখানো পাওয়া যায়নি।

রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় রুম্পার সাবেক প্রেমিক আব্দুর রহমান সৈকতকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় ডিবি।

কিন্তু তার কাছ থেকে রুম্পার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। ঘটনাস্থলের আশপাশের এবং রুম্পাদের শান্তিবাগের বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনার পরও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে আধারেই রয়ে গেছে রুম্পার মৃত্যু রহস্য।

রুম্পার বিষয়ে জানতে চাইলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা পুলিশ পরিদর্শক রোকন উদ্দিন।

তিনি বলেন, এখনো তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। বাবা হিসেবে এটা জানা প্রয়োজন মেয়ে কিভাবে এবং কেন মারা গেল। কেউ তাকে ফেলে দিয়েছে নাকি সে নিজেই পড়ে গেছে। এখনো এসব অজানা রয়ে গেছে।

তিনি জানান, এ ঘটনায় রুম্পার কয়েকজন বন্ধুকে তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেও পরবর্তীকালে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট ছাড়া অপর রিপোর্টগুলো এখনও পুলিশের হাতে আসেনি।

এ বিষয়ে কোনো মামলার তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স ভবন থেকে পড়ে রুম্পার মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিছু আলামত পাওয়া গেছে ওই ভবন থেকে। তবে তাকে সেখান থেকে কেউ ফেলে দিয়েছে, নাকি সে নিজে পড়ে আত্মহত্যা করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট হাতে এসেছে। ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

পরিবারের সাথে শান্তিবাগের বাসায় থাকতেন রুম্পা। পড়তেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশনি করতেন। ৪ ডিসেম্বর প্রাইভেট পড়ানো শেষে সন্ধ্যায় বাসার সামনে যান। ফোনে তার মাকে বলেন, চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম সুমনের হাতে এক জোড়া স্যান্ডেল পাঠাতে। সুমন স্যান্ডেল নিয়ে এলে তা পরিবর্তন করেন তিনি। এর পর নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, আংটি, হাতঘড়ি ও ব্যাগ বাসায় পাঠিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পরে রাত ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর ভবনের সামনে থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পাশেই আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ১১তলা ভবন। লাশটি অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়। থানায় হত্যা মামলা করে পুলিশ। পরদিন রাতে লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয় তখনই।

রুম্পা ও তার সাবেক প্রেমিক আব্দুর রহমান সৈকত একসময় সিদ্ধেশ্বরীতে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে রুম্পা ও সৈকতের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রায় সাত মাস আগে প্রেমের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। কিন্তু রুম্পা তার সঙ্গে সম্পর্ক চলমান রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়। এরই মধ্যে আর্থিক সংকটের কারণে সৈকত স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন।