সীমান্তবাংলাঃ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পুরাতন রত্নাপালং ইউপি অফিস ঝাউতলা-গয়ালমারা সড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টান অনিয়মনের আশ্রয় নিয়ে সড়কের উন্নয়ন কাজে বালির পরিবর্তে পাহাড়ি লাল মাটি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের কংক্রিটের ব্যবহার করায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের সংস্কার ও দুই পাশে প্রশস্তকরণ কাজ টেকসই না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে পুন:রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন নিয়মিত পথচারীরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র অর্থায়নে রত্নাপালং ইউনিয়নের পুরাতন রত্নাপালং ইউপি অফিস ঝাউতলা-গয়ালমারা পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ এগিয়ে চলছে। এতে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ঢাকার কলাবাগানস্থ ‘নবারুন ট্রেডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজে দেখভাল করছেন।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রত্নাপালং ইউনিয়নের ঝাউতলা হতে গলায়মারা মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। কিন্তু সড়ক উন্নয়ন কাজের নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্টান নবারুন ট্রেডার্স, কলাবাগান, ঢাকা বালির পরিবর্তে পাশ্ববর্তি বনবিভাগের পাহাড় থেকে মাটি এনে সড়কের সংস্কার কাজে ব্যবহার করছে। এছাড়াও দুই পাশে প্রশস্তকরণ কাজে সিডিউল মোতাবেক কাজ না করে উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় রত্নাপালং এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছৈয়দ মো: নোমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার সারাদেশে গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে যে কোন ধরণের উন্নয়নমূলক কর্মকা-চালিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঝাউতলা থেকে গয়ালমারা সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্টান সরকারের এ উন্নয়ন কর্মকা-কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পরিকল্পিতভাবে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়ক উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবী জানান।
গয়ালমারা এলাকার টমটম চালক মো: কালু বলেন, সে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ সড়কে রিক্সা পরবর্তিতে টমটম চালিয়ে আসছে। এ সড়কটির পুন:সংস্কার করার জন্য যে সমস্ত বালি এবং কংক্রিট মজুদ করা হয়েছে তা দেখে যাত্রী ও পথচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সে আরো বলেন, এই নিম্নমানের মালামাল দিয়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ করা হলে বেশি দিন যেতে না যেতে আবারও সড়কটি জনচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় পথচারী রত্নাপালং ইউনিয়নের রুহুল্লারডেবা এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম, মোক্তার আহমদ, ছলিম উল্লাহ ও ফরিদ আলম অভিযোগ করে বলেন, সড়কের উন্নয়ন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি ধীরগতির কারণে সাধারণ মানুষকে চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওই কলেজ ছাত্রী আমেনা বেগম বলেন, উন্নয়ন কাজের গুণগতমান ভাল না হলে সড়কটি টেকসই হবে না। সরকারের ব্যয়কৃত অর্থ মাটি হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঝাউতলা-গয়ালমারা সড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজের গুণগতমান সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। বিষয়টি এলজিইডি অফিস থেকে জানতে হবে। তবে আমিও গুণগতমান নির্ণয়ের বিষয়ে এলজিইডি অফিসকে জানাবো। তিনি ঢাকাস্থ একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজ বাস্তবায়ন করছে বলে জানালেও ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের নাম বলতে পারেনি।
এ ব্যাপারে জানার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নবারুন ট্রেডার্স কর্তৃপক্ষের সাথে শত চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সিডিউল মোতাবেক কাজ না হলে চলমান সড়ক উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া /১৩/৯/২০২০