উখিয়ার কথিত ‘অক্সিজেন’ ও ‘হোস্ট কমিউনিটি’র শিক্ষিত বেকারদের প্রচ্ছন্ন আর্তনাদ!

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২০

যখন মানুষের সেবককে উল্টো আমরা মুনিবরা দেবতাতুল্য নস্যি করি, সেই সেবক তো বেলুনে নাইট্রোজেন গ্যাস ভরে, ফানুসের লাহান হয়ে আকাশে উড়াল দিয়ে দেশান্তর হবে এটাই স্বাভাবিক! আমাদের কিছু সাংবাদিক বন্ধুরা, সাংবাদিকতার ‘ইথিকস’কে জ্বলাঞ্জলি দিয়ে একজন জনগনের সেবককে তথাকথিত ‘অক্সিজেন’ তকমা দিয়ে মহীরুহে আবির্ভূত করে স্থানীয়দের স্বার্থ ঊপেক্ষা করার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ সংরক্ষন করে তাবৎ স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করেছেন।

তথাকথিত অক্সিজেন নামক সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ‘স্থানীয় বলতে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগকে’ আওতায় এনে হোস্ট কমিউনিটির ৭০% চাকুরী কৌটায় উনার আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, শুভাকাংখীদের চাকুরী ব্যবস্থা করে দিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে সত্যিকারের স্থানীয়দের চাকুরী সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে সরগরম হয়ে আছে উখিয়ার আকাশ বাতাস! তেমনি এক উপাখ্যান রচনা করেছেন উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ‘চাকুরী মেলার’ নামে স্থানীয় শিক্ষিত সমাজের সাথে ধাপ্পাবাজির উজ্জ্বল নিদর্শন স্থাপন করেছেন বলে চাউর হয়ে আছে!

উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় শিক্ষিত বেকার জনগোষ্টি এখন ‘গরীবের সুন্দরী বউ, সবার ভাবী’ অবস্থায় পর্যবসিত হয়ে আছে! আমার জানা মতে রোহিংগা অধ্যুষিত ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ১২৮টি দেশি বিদেশি এনজিও কর্মরত রয়েছে। এনজিও গুলোর হর্তাকর্তাগুলো সব গেস্ট কমিউনিটি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত। এনজিও সংস্থাগুলোর নিয়োগ (বাণিজ্য) একচেটিয়া নিয়ন্ত্রন করেন সেই গেস্ট কমিউনিটির উনারাই! বিভিন্ন সময়ে ‘বিডি জবস’ এ-র মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিওতে নিয়োগের সার্কুলার দেওয়া হয়। শুনা যায়, সার্ক্যুলারের পুর্বেই উক্ত পদ গুল্যোর জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রার্থী সিলেক্টেড করে রাখা হয়, সার্ক্যুলারটা শুধু নিয়ম রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় মাত্র! অনেক চাকুরী প্রার্থীর অভিযোগ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রার্থীদের ইন্টারভিউ এ-র জন্যও ডাকা হয়না! কারণ তা পুর্বেই নিয়োগ কর্তার বা ঐ এনজিও এ-র উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে সিলেক্টেড করা হয়ে থাকে! স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই বুভিন্ন পোস্টে চাকুরী করছেন কিন্তু খুব কম সংখ্যক লোকই আছেন, যারা বিভিন্ন এনজিও এ-র মিড লেভেল ও হাই লেভেল জব প্রাপ্ত হয়েছেন। প্রায় সবগুলোই নিম্ন পোস্টে তাদেরকে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে নিয়োগ প্রদান করা হয়। স্থানীয় যারাই নিয়োগ প্রাপ্ত হন তারা সারা জীবন নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থেকে যেন ‘কুয়োর ব্যাংগ’ হয়েই থাকেন সারা জীবন!

প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক, স্থানীয়দের মধ্যে পদবী অনুযায়ী যোগ্যতা সম্পন্ন লোক না পাওয়ার কারনে স্থানীয়দের নিয়োগ প্রদান করার সুযোগ হয়ে উঠেনা! কথাটি যদিও বা আংশিক সত্য, তথাপি আমার কথা হচ্ছে যারাই যোগ্যতা সম্পন্ন আছেন তাদেরকে কেন বিভিন্ন ছুতায় নিয়োগ প্রদান করা হয়না?

সত্য বলতে কি, আমাদের স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, নের্তৃবৃন্দ যারা আছেন, তারা স্থানীয় শিক্ষিত বেকারদের ব্যাপারে বড়ই উদাসীন! উনারা শিক্ষিত বেকারদের কর্ম সংস্থানের ব্যাপারে কোন কার্যকরী উদ্দ্যোগ এখনও গ্রহন করেননি! রোহিংগা দেশে আসার তিন বছর পুর্তি উদযাপন করেছেন বহু আগে, কিন্তু এ-ই তিন বছরে লোকাল কমিউনিটির ক্ষয় ক্ষতির পরিমান হিসেব করা কি আসলেই যাবে? তার বিপরীতে সাধারন স্থানীয়রা আসলেই কি পেয়েছে? সবই ‘তেলের নাথায় ঢাল তে’ অবস্থা হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিবর্গ বিভিন্নভাবে আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে, যারা সরকার দলীয় পৃষ্টপোষকতা ও স্থানীয় নেতা নের্তৃবৃন্দের তল্পীবাহক হিসেবে কাজ করে, করাতে পারবে, এবং যারা ঐসকল নেতা নের্তৃর কথার বাইরে যাবেনা বলে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যায় কেবল সেসকল আস্থাভাজনদের!

আবার যারাই একটু সচেতন, শিক্ষিত, তড়িৎকর্মা, ভাল-মন্দ বাছ-বিচার করতে জানেন, কোন দল বা মতের অন্ধভক্ত নয়, একটু স্বাধীনচেতা, অন্যায়ের আপোষকামী ভাব নেই, সত্যনিষ্ট, আদর্শবান, একটু প্রতিবাদী-কিন্তু তারা শত দলীয় আদর্শ বুকে লালন করেননা কেন-তারা উল্লেখিত সে সকল সুযোগ-সুবিধা, আয় রোজগারের পথ থেকে যোজন যোজন দূরে থেকে কোন প্রকার আল্লাহ বিল্লাহ করে জীবন যাপন করছেন।

আমাদের উখিয়া-টেকনাফের সামষ্টিক উন্নয়নে পরিকল্পিত কোন উদ্দ্যোগ যেমনি নেই, তেমনি বৃহত্তর উন্নয়নের কোন রুপরেখাও নেই। উখিয়া টেকনাফ গ্রাজ্যুয়েট গ্রুপের সেদিনের ভার্স্যুয়াল মিটিং এ আমাদের ৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানীত চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জননেতা জাহাংগীর কবির চৌধুরী সাহেবের সাথে কথোপকথনে কিছু পরামর্শমুলক কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। অনেক পরামর্শের একটি পরামর্শ ছিল, উখিয়া টেকনাফের সামষ্টিক উন্নয়নে প্রত্যেক ইউনিয়নের সম্মানীত চেয়ারম্যান সাহেবের তত্ত্বাবধানে, ওয়ার্ড মেম্বারের সহযোগিতায় শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের একটা লিষ্ট করে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন এনজিও/আইএনজিও অফিসে সম্মিলিতভাবে ঐ লিষ্ট সরবরাহ করে স্থানীয় শিক্ষিত জনগোষ্টির চাকুরীর নিশ্চয়তা প্রদানে এগিয়ে আসার আহবান ছিল। তাছাড়া ৫ নং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের মত প্রত্যেক ইউনিয়িন ভিত্তিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে প্রত্যেক ইউনিয়নকে নিয়ে উখিয়া টেকনাফ উপজেলার শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে একটি মোর্চা গঠন করে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কে সমন্বয় করে, স্থানীয় সাংসদ মহোদয়াকে ফোকাস করে, উভয় উপজেলার শিক্ষিত বেকারদের চাকুরীর ব্যবস্থা করার সুন্দর উদ্দ্যোগ গ্রহন করা যেতে পারে। আমি মনে করি তাতে ইতিবাচক গুরুত্বপূর্ণ ফল বের হয়ে আসতে পারে। আমি যতটুকু জানি, কক্সবাজার পৌরসভার মাননীয় চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান সরুওয়ার সাহেব ও রামু কক্সজার সদরের মাননীয় সাংসদ মহোদয় এলাকার শিক্ষিত বেকারদের লিষ্ট করে আগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলাকার শিক্ষিত বেকারদের চাকুরীর ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা উখিয়া টেকবনাফবাসী ‘হোস্ট’ হয়েও সে সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকব কেন সেটাই বড় প্রশ্ন!!

অনেকেই বলেছেন, নেতা নের্তৃরা নিজেদের আখের গোছানোর কাজে নিজেদের ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন অবিরত। তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন এনজিও দের হোস্ট কমিউনিটির ৩০% বরাদ্দ নিয়ে কাজ করার সুযোগ প্রাপ্ত হয়ে জনগনের সাথে সম্পৃত্ত হয়ে সেবামুলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত রাখতে পারেন। তাছাড়া সরকার কর্তৃক উন্নয়ন্মূলক বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করার সুযোগ পান।আমজনতার সাথে ভালভাবে সম্পৃত্ত হয়ে জনগনের অধিকার সংরক্ষণ করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত করার প্রতিদান দেবার সুযোগ পান বা আবার অনেকের নামে নয় ছয়ের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে!

 

আয়াজ রবি

লেখক, কলামিষ্ট ও মানবাধিকার কর্মী

২৫ অক্টোবর ২০২০